হঠাৎ গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির কার্যক্রম স্থগিত

প্রতিষ্ঠার এক বছর পূর্তির আগেই সারাদেশে সংগঠনের সকল কমিটি ও কার্যক্রম স্থগিত করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি। শনিবার ভোর তিনটার দিকে নিজেদের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টের মাধ্যমে এই ঘোষণা দেয় ছাত্র সংগঠনটি।

গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির লোগো

প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূখ্য সমন্বয়করা ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সঙ্গে যুক্ত। তাদের মধ্যে নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদ বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় আড়াই মাস ধরে সকল শ্রেণিকক্ষ এবং পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু একদল শিক্ষার্থী শ্রেণীকক্ষে ফেরার আগে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছে। সম্প্রতি এই দাবি আদায়ে তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভও করেছে।

কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং তৎকালীন সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন, ছাত্রলীগের হামলার পর থেকেই ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জোরদার হতে থাকে।

আন্দোলনের একপর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয়ক, আব্দুল কাদের, দলীয় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ এবং ছাত্র ইউনিয়নগুলোকে সক্রিয় করাসহ নয় দফা দাবি ঘোষণা করেন।

৩ আগস্ট পর্যন্ত নয় দফা দাবিকে কেন্দ্র করে এই বিক্ষোভ চলতে থাকে এবং অবশেষে ৩ আগস্ট সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর, অনলাইন ক্যাম্পেইন থেকে শুরু করে রাস্তায় আন্দোলন – সর্বত্রই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য একদল শিক্ষার্থী সোচ্চার হয়ে ওঠে। তারা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত ক্লাসে যোগদান থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দেয়।

শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি ফেসবুক গ্রুপে একদল শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য অনুরোধ জানায়।

এর কয়েক ঘন্টা পরেই গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি কোনো নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ না করেই ভোর তিনটার দিকে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দেয়।

প্রসঙ্গত, গত বছর ৪ অক্টোবর ডাকসু ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি আত্মপ্রকাশ করে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক এবং ছাত্রশক্তির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাদের উদ্দেশ্য কোনো বিতর্ক এড়িয়ে চলা। তারা শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে চান, কারণ তারা আগে আন্দোলনের সময় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছিলেন।

স্থগিত ছাত্র সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব এবং ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বকর মাজুমদার বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যগুলি মূলত অর্জিত হয়েছে। আমরা কয়েকদিন ধরেই ছাত্রশক্তির কমিটি এবং কার্যক্রম স্থগিত করার কথা ভাবছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর, ৯ অথবা ১০ আগস্টের দিকে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। অতঃপর, শুক্রবার ছাত্রশক্তির সকল কমিটি এবং কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এর পেছনে নির্দিষ্ট কারণ নেই।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে আবু বকর বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে। আমরা ক্যাম্পাসে কোনো দলীয় ছাত্র রাজনীতি চাই না। ছাত্র ইউনিয়নের ভিত্তিতে গঠনমূলক রাজনীতিই আমাদের দাবি।