জাতিসংঘ প্রধান: গাজা যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন হস্তক্ষেপ প্রয়োজন

আল জাজিরার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েলের ওপর আরও চাপ প্রয়োগ করতে হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। স্থানীয় সময় অনুযায়ী যখন তিনি এসব কথা বলেন তখনও গাজায় তীব্র সংঘর্ষ চলছিল।

অ্যান্তোনিও গুতেরেস

দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের অধ্যাপক তামের কারমৌট জানান, আল জাজিরার সাক্ষাৎকারে গুতেরেস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন যে তাদের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

গুতেরেস বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র পরাশক্তি যারা অর্থ, অস্ত্র সরবরাহ এবং কূটনৈতিক সুরক্ষা প্রদানের মাধ্যমে ইসরায়েলকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সাহায্য করছে।”

“বার্তাটি স্পষ্ট: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হস্তক্ষেপ করতে হবে।” জাতিসংঘ প্রধানকে উদ্ধৃত করে কারমৌট বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরে এই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সহায়তা করছে।”

তবে, গুতেরেস স্বীকার করেছেন যে তার দাবির প্রতি সাড়া দেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

“আমেরিকান রাজনীতি সম্পর্কে আমি যথেষ্ট অবহিত এবং জানি যে এটি ঘটবে না,” বলেন গুতেরেস।

তিনি আরও বলেন, তবুও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা এবং তাদের কাছে এটি স্পষ্ট করে বলা গুরুত্বপূর্ণ যে “দুই রাষ্ট্র সমাধানকে নস্যাৎ করা যাবে না”।

এদিকে, গতকাল ভোর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৬ জন ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে বলে গাজার চিকিৎসা সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এই সংখ্যার মধ্যে রয়েছে একই পরিবারের পাঁচ সদস্য, যারা আজ সকালে দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসিতে হামলায় নিহত হন বলে ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে। তারা জানায়, নিহতদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে।

এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়াসাস আজ গাজায় “যুদ্ধবিরতির আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন, যা ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্নির্মাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ”।

তিনি এক্স-এ লিখেছেন: “চলমান সংঘাতের মধ্যে, সমস্ত প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা, যার মধ্যে পুনর্বাসনও অন্তর্ভুক্ত, সুনিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ যাতে অসুস্থতা এবং মৃত্যু রোধ করা যায়।”

আল জাজিরার সাক্ষাৎকারে গুতেরেস যুদ্ধ বন্ধে তার অসহায়ত্বের কথা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন।

“এই যুদ্ধ বন্ধ করার মতো ক্ষমতা আমার নেই। আমাদের একটি কণ্ঠ আছে, এবং সেই কণ্ঠ স্পষ্টভাবে শুরু থেকেই বলে আসছে যে এই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগ বন্ধ করতে হবে এবং তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে।”

আজ আমরা যেসব নাটকীয় সংঘাতের মুখোমুখি হচ্ছি, তা বন্ধ করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদের “পদ্ধতিগত ব্যর্থতার” অভিযোগ এনে জাতিসংঘ প্রধান বলেন, “প্রধান শক্তিগুলোর মধ্যে বিদ্যমান ভূ-রাজনৈতিক বিভেদ এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করেছে যেখানে বিশ্বের যেকোনো দেশ বা যেকোনো আন্দোলন মনে করে যে তারা যা খুশি তাই করতে পারে কারণ তাদের কোনো শাস্তি হবে না।”

“পশ্চিম তীরের যেকোনো সম্ভাব্য জমি দখল বা অবৈধ বসতি স্থাপনকে আমাদের অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। ভবিষ্যতে পশ্চিম তীর, গাজা এবং পূর্ব জেরুজালেম (যা পশ্চিম তীরের অংশ) নিয়েই গঠিত হবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র,” তিনি আরও যোগ করেন।

এদিকে, ইরানকে ইসরায়েলের ওপর হামলার হুমকি থেকে বিরত রাখার জন্য আংশিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন করা দুটি মার্কিন বিমানবাহী ক্ষেপণাস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে একটি এই অঞ্চল ত্যাগ করেছে বলে বৃহস্পতিবার পেন্টাগন জানিয়েছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন থিওডোর রুজভেল্ট ক্ষেপণাস্ত্র গোষ্ঠীকে মধ্যপ্রাচ্যে থাকার নির্দেশ দেওয়ার প্রায় তিন সপ্তাহ পর দ্বৈত ক্ষেপণাস্ত্র উপস্থিতি শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমনকি আব্রাহাম লিংকন ক্ষেপণাস্ত্র গোষ্ঠী তাদের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পরও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পেন্টাগনের মুখপাত্র মেজর জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, রুজভেল্ট এখন মধ্যপ্রাচ্য ত্যাগ করেছে এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দিকে যাচ্ছে।

এদিকে পশ্চিম তীরে, দখলকৃত পশ্চিম তীরের শহর টুবাসে এক বিমান হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের পরিবারগুলো আজ জানাজার নামাজ আদায় করেছে। ইসরায়েলি বাহিনী তাদের সর্বশেষ অভিযান শেষে অঞ্চলটি থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বুধবার এক বিবৃতিতে জানায় যে, উত্তর পশ্চিম তীরের টুবাস এলাকায় তাদের বাহিনী “সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে” অংশ নিয়েছে।

ফিলিস্তিনের সরকারি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টুবাস থেকে প্রত্যাহার করে নেয় , যার ফলে জানাযা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।

প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, বুধবার ভোরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় টুবাসে যে চার ব্যক্তি নিহত হন, আজ তাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। একই হামলায় নিহত পঞ্চম ব্যক্তির জানাযা শুক্রবার উত্তর পশ্চিম তীরের তামুনে সম্পন্ন করা হয়েছে।

গত অক্টোবর মাসে গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। এছাড়াও ৯২ হাজারেরও বেশি মানুষ ঘটনায় আহত হয়েছেন।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অথবা ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের হাতে অন্তত ৬৭৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।