১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৬৩ কোটি ডলার চায় রাশিয়া

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য নেওয়া ঋণের বকেয়া সুদ ও অন্যান্য খরচ বাবদ ৬৩ কোটি মার্কিন ডলার পরিশোধ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়েছে রাশিয়া। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ অর্থ পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

রাশিয়ার একটি বৃহৎ আর্থিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ভিইবি.আরএফ এবং রাশিয়ার সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে গত ২১ আগস্ট এ সংক্রান্ত চিঠিটি দেয়।

উল্লেখ্য, রাশিয়ার ব্যাংকগুলোর ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে গত জুনে লেনদেনের বিকল্প পদ্ধতিতে বকেয়া সুদ, কমিটমেন্ট ফি ও জরিমানা মওকুফের আবেদন জানিয়েছিল বাংলাদেশ।

রাশিয়ার পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যাংক অব চায়নার সাংহাই শাখায় মার্কিন ডলার অথবা চীনের মুদ্রা ইউয়ানে পাওনা অর্থ জমা দিতে হবে।

তবে ১৫ সেপ্টেম্বর রোববার এবং ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর চীনে সরকারি ছুটি থাকায় পরিশোধের সম্ভাব্য তারিখ ধরা হচ্ছে ১৮ সেপ্টেম্বর।

রাশিয়ার দেওয়া ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার চার শতাংশ। বকেয়ার জন্য জরিমানা সুদ আরোপ করা হয়েছে আরও দুই দশমিক চার শতাংশ।

রাশিয়ার চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ১৫ মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত সময়ে সুদ ও জরিমানা সুদ বাবদ তাদের পাওনা ৪৮ কোটি ডলার। এরপর ১৬ মার্চ থেকে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সুদ বাবদ পাওনা ১৫ কোটি ডলার। এছাড়াও কমিটমেন্ট ফি বাবদ সাড়ে ৭ লাখ ডলার পরিশোধ করতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়ার দেওয়া ডেডলাইন মিস হলে জরিমানা ও ঋণের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে জটিলতা বাড়তে পারে। কারণ, চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পের ঋণ চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। গত জুনে বাংলাদেশ এই ঋণের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করার প্রস্তাব করেছে।

এ অবস্থায় রাশিয়ার দাবি করা সুদ পরিশোধ না করলে নতুন করে ঋণের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এর আগে বকেয়া সুদ পরিশোধের পরিবর্তে রাশিয়াকে নতুন প্রকল্পে, পুঁজিবাজারে অথবা বাংলাদেশ থেকে পণ্য ক্রয়ে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশ।

তবে রাশিয়ার চিঠিতে এসব প্রস্তাব গ্রহণের কোনো ইঙ্গিত নেই। এমনকি ২০২৭ সালের মার্চ থেকে শুরু হওয়া ঋণের আসল পরিশোধ দুই বছর পিছিয়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করেছে রাশিয়া।

বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সুদ পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল প্রস্তুত রেখেছে সরকার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ সুদ পরিশোধ করে আসছিল।

কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ান ব্যাংকগুলোর ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে লেনদেন পদ্ধতি ও মুদ্রাজনিত জটিলতায় সুদ পরিশোধ বন্ধ রয়েছে। এতে জরিমানা সুদের পরিমাণও বাড়ছে।

তারা আরও জানান, ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই রাশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত ঋণ চুক্তিটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে। ২০১৭ সালে এই ঋণ বিতরণ শুরু হয়।

রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার। এর ৯০ শতাংশ ঋণ হিসেবে দিচ্ছে রাশিয়া। বাকি ১০ শতাংশ বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করা হবে।

এই ঋণ বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়াকে সরাসরি অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

তাই বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি এস্ক্রো অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে রাশিয়ার পাওনা অর্থ জমা রাখা হচ্ছে। তবে কোন মুদ্রায়, কোন দেশের ব্যাংকে সে অর্থ পাঠানো হবে, তা নিয়ে সমস্যা রয়েছে।

এদিকে, নির্ধারিত সময়সূচী অনুযায়ী রূপপুর প্রকল্পের কাজ এগোচ্ছে না। বিশেষ করে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সঞ্চালন লাইন নির্মাণ বিলম্বিত হচ্ছে।

সিডিউল অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করার কথা রয়েছে। কিন্তু সঞ্চালন লাইন স্থাপন না হলে সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।