ভারতের একটি শহরকে নিজেদের বলে দাবি করল পাকিস্তান

বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তানের দখলে থাকা কাশ্মিরের একটি অংশকে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে ভারত। এবার ভারতের গুজরাট রাজ্যের জুনাগড় শহরকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করল পাকিস্তান। তাদের এই দাবিতে ভারতজুড়ে ব্যাপক হৈ-চৈ শুরু হয়েছে। খবর দ্য ন্যাশন্স, এবিপি।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুমতাজ জাহরা বালোচ

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুমতাজ জাহরা বালোচ দাবি করেন, ভারত ১৯৪৮ সাল থেকেই জুনাগড় অঞ্চলকে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। এই দখলদারির নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে পাকিস্তানের অবস্থান সবসময়ই স্পষ্ট এবং পরিষ্কার।

ওই সংবাদ সম্মেলনে মুমতাজ বলেন, দেশভাগের সময়েই জুনাগড় পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। পরে ভারত সেটি অবৈধভাবে দখল করে নেয়। পাকিস্তান মনে করে জুনাগড় তাদেরই একটি অংশ এবং এটি অবৈধভাবে দখল করে জাতিসংঘ সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে ভারত।

মুমতাজ দাবি করেছেন, পাকিস্তান পুরো বিষয়টিকে ঐতিহাসিক ও আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে থাকে। তারা বিষয়টি বেশ কয়েকবার আন্তর্জাতিক ফোরামেও উত্থাপন করেছেন। জুনাগড়কে ভারতের অবৈধভাবে দখল করা জম্মু ও কাশ্মিরের মতো একটি অসমাপ্ত অ্যাজেন্ডা হিসেবে বিবেচনা করে পাকিস্তান।

ইসলামাবাদ এবার এই বিষয়টি নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় বলেও জানান পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র।

তবে ভারত বলছে, জুনাগড় নিয়ে পাকিস্তানের এই দাবি নতুন কিছু নয়। ২০২০ সালে ভারতের বেশকিছু অঞ্চলকে নিজেদের রাজনৈতিক মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করেছিল পাকিস্তান। এতে পাকিস্তান অধিকৃত জম্মু-কাশ্মির এবং লাদাখের কিছু অংশের পাশাপাশি গুজরাটের জুনাগড় ও মানবগড় শহর এবং স্যর ক্রিক অঞ্চলও পাকিস্তানের অংশ বলে দাবি করা হয়েছিল।

পাকিস্তানের মন্ত্রিসভাও সেই মানচিত্রে অনুমোদন দিয়েছিল। দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, এই মানচিত্র পাকিস্তানের প্রতিটি নাগরিক এবং কাশ্মিরের মানুষের আশার প্রতীক। তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সেটিকে অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন উচ্চাকাঙ্ক্ষা বলে উড়িয়ে দেয়। এরপর পাকিস্তানের ক্ষমতায় পরিবর্তন এসেছে। দেশ পরিচালনা করছে এখন শাহবাজ শরিফের সরকার। কিন্তু তারাও দাবি করেছে, জুনাগড় অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে ভারত।

ইসলামাবাদের দাবি, জুনাগড়ের শেষ নবাব মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর খান চাইতেন, শহরটি যেন পাকিস্তানেরই অংশ হয়। তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে আমার দাদা নবাব মোহম্মদ মহব্বত খান (তৃতীয়) পাকিস্তানের অংশ হতে স্বাক্ষর করেছিলেন। তবে এর জন্য তাকে রাজত্ব হারাতে হয়েছিল। আমরা এখনও জুনাগড়ের জন্য লড়াই করছি। বিষয়টি এখন জাতিসংঘে বিচারাধীন রয়েছে।

জানা গেছে, জুনাগড়ের নবাব মোহম্মদ মহব্বত খান (তৃতীয়) চেয়েছিলেন পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হতে। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু প্রজারা তার এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। এ অবস্থায় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর নির্দেশে জুনাগড়ের কাছে পৌঁছায় ভারতীয় সেনা। এরপর মহব্বত খান সপরিবারে করাচি চলে যান। পরবর্তী সময়ে নির্বাচনের মাধ্যমে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয় জুনাগড়কে।