উপদেষ্টা আসিফের বার্তা, ভারত কী শুনতে প্রস্তুত?

অস্থায়ী সরকারের উপদেষ্টা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া বলেছেন, ভারতকে এখন শুধু একটি দলের সঙ্গে নয়, সরাসরি বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া

কুমিল্লা টাউন হল মাঠে মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “আগের সরকার ছিল জনগণের সমর্থনহীন, আত্মসমর্পণকারী সরকার। তারা অন্যান্য দেশের সঙ্গে মাথা নোয়াই করেই কথা বলত। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। সার্বভৌম দেশ হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে, দলীয় স্বার্থ নয়, জাতীয় স্বার্থের কথা বলে অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক করতে চাই।”

তিনি আরও বলেন, সীমান্তে হত্যাসহ আগের সরকারের নীতি অনুযায়ী ভারত তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। জনগণের পক্ষ থেকে আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ভারতকে এখন শুধু আওয়ামী লীগ নয়, বরং সরাসরি বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

উপদেষ্টা আসিফ বলেন, সরকারকে জনগণের তৈরি পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। ভারতকে তাদের আগ্রাসী আচরণ বন্ধ করে সম্মানের সঙ্গে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করে উপদেষ্টা আসিফ বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ বেশি কিছু চায় না। তারা শুধু মত প্রকাশের স্বাধীনতা চায়। তারা বিলাসিতা নয়, দুবেলা দুমুঠো খেয়ে শান্তিতে বেঁচে থাকতে চায়। দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদী শাসনের পর ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াই ছিল চিন্তার কারণ। এখন অন্তত র‍্যাব, ডিবি, পুলিশের অভিযানের ভয়ে না থেকে মুক্ত কণ্ঠে কথা বলার শক্তি আমরা পেয়েছি।”

তিনি আরও বলেন, “আপনারা আমাদেরকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বলেছেন এবং আমরা আমাদের এই বিপ্লবের মর্ম ধরে রাখতে এবং এর সাফল্য নিশ্চিত করতেই এই দায়িত্ব নিয়েছি। তবে আমাদের আসল জায়গা রাস্তায়। ক্যাবিনেট অফিসের চেয়ে আপনাদের মাঝেই আমরা বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।”

আসিফ মাহমুদ বলেন, “জীবনে প্রথমবারের মতো এ ধরনের কোনো আয়োজনে আসলাম। গত ৫৩ বছরে সমস্যার যে পাহাড় তৈরি হয়েছে, সেটার জন্য মানুষ সবাইকে ধিক্কার দিয়েছে। আমরা সেগুলো দ্রুত সমাধানের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। তবে কয়েক দশকের সমস্যা একদিন বা একমাসে সমাধান করা সম্ভব নয়। ইতিমধ্যে কিছু পরিবর্তন আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। গত ১৬ বছরে যেভাবে ত্রাণ চুরি, দুর্যোগে অব্যবস্থাপনা দেখা যেত, সম্প্রতি তা আর দেখা যাচ্ছে না।”

প্রবাসীদের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “যারা আমাদের অর্থনীতি চাঙ্গা রেখেছে, তাদেরকে বিমানবন্দরে নির্যাতন করা হতো, তাদের মালপত্র আটকে রেখে হেনস্তা করা হতো। এখনও কি তা হচ্ছে?”

“সরকারি কার্যালয়ে গিয়ে মানুষকে হয়রানি, ভোগান্তির শিকার হতে হতো। এখনও কি কারো সেই ঔদ্ধত্য রয়েছে? ভবিষ্যতে যেন কারো সেই ঔদ্ধত্য না থাকে সে জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এজন্য আমরা কাঠামোগত পরিবর্তনের কথা বলছি। এই পরিবর্তন কীভাবে আসবে, তা আপনাদেরই নির্ধারণ করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “ছাত্র রাজনীতি করতে হবে কিনা, এই প্রশ্ন অনেকের মনে ঘুরপাক খায়। আমি মনে করি, রাজনীতি করা ব্যক্তিগত অধিকার। তবে রাজনৈতিক সচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক সচেতনতা ও ঐক্যের অভাবে আমাদেরকে ৫ আগস্টের মতো ঘটনার শিকার হতে হয়েছে।”

আসিফ মাহমুদ বলেন, “আমরা শহীদদের একটি তালিকা তৈরি করছি। যারা এই আন্দোলনে জীবন দিয়েছেন, তাদের সকলের খোঁজ খবর নিয়ে তালিকাভুক্ত করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সমন্বয়ক আবু বক্কর মজুমদার, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রুবেল হোসেন, বুয়েটের মাহফুজ খান, আব্দুল কাদের, ম্রিয়ন মানি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাহি কাজওয়াল ওহি, জিয়াউদ্দিন আয়নসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।