প্রচণ্ড গরমে ঘন ঘন লোডশেডিং

দাবদাহে প্রাণ ওষ্ঠাগত। কিন্তু এই প্রচণ্ড গরমে জনজীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে ঘন ঘন লোডশেডিং। বিদ্যুতের চাহিদা রেকর্ড ছাড়িয়েছে, কিন্তু উৎপাদন সেই গতিতে বাড়াতে না পারায় নগর-গ্রামে লোডশেডিং বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি ছিল প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট, যা সাম্প্রতিক সময়ে সর্বাধিক। এই মাস থেকে বিপিডিবি দৈনিক সর্বোচ্চ ১৬,২০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ১৩,৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। গত মাসে চাহিদা ছিল ১৪,০০০ থেকে ১৪,৫০০ মেগাওয়াট।

বিপিডিবি সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহী, রংপুর, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ এবং সিলেট অঞ্চলে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে।

ময়মনসিংহের রাফিউল ইসলাম জানান, গত তিন-চার দিন ধরে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। এই গরমে এটা অসহনীয়। রাত ১২টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে। তারপরে সারাদিন এক থেকে দুই ঘণ্টা অন্তর বিদ্যুৎ চলে যায়।

জয়পুরহাটের এক ব্যবসায়ী জানান, আমাদের কারখানায় প্রতি দুই ঘন্টা অন্তর অন্তত এক ঘন্টা বিরতি নিতে হচ্ছে। কখনও কখনও তিন থেকে চার ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ থাকে না।

বিপিডিবি সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানি সঙ্কট ও রক্ষণাবেক্ষণের কারণে কমপক্ষে ১০,০০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা অলস পড়ে আছে। এর মধ্যে জ্বালানি সঙ্কটের কারণে ৬,৩০০ মেগাওয়াট এবং রক্ষণাবেক্ষণের কারণে ৩,৬০০ মেগাওয়াট।

গ্যাস সরবরাহে ঘাটতির কারণে কমপক্ষে ৪,০৯৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

গত মে মাসে রেমাল ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভাসমান এলএনজি টার্মিনালটি এখনও পূর্ণ ক্ষমতায় কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। এই টার্মিনাল থেকে দৈনিক প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।

অন্যদিকে ভারতের আদানি গ্রুপের ১,৪৯৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন গোড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকেও পূর্ণ ক্ষমতায় বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে প্রায় ১,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।

সম্প্রতি তারা ৮ মাসের বকেয়া ৮০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের জন্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে চিঠি পাঠিয়েছে।

কয়লার ঘাটতির কারণে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও তার সক্ষমতার চেয়ে কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। অন্যদিকে চট্টগ্রামের এসএস বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটের মধ্যে একটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ রয়েছে।

বিপিডিবির তথ্য অনুসারে, বর্তমানে প্রায় ২,৩০০ মেগাওয়াট, অর্থাৎ ৬,৬০৪ মেগাওয়াট মোট কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশ অলস রয়েছে।

বিপিডিবি কর্মকর্তারা আরও জানান, ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে জ্বালানি তেল আমদানিতেও বিঘ্ন ঘটেছে।