শুল্ক কমলেও আলু-পেঁয়াজের দামে স্বস্তি নেই

সরকার পেঁয়াজ ও আলু আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করলেও এখনও ভোক্তারা এর সুফল পাচ্ছেন না। বাজারে এ দুটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনও আকাশছোঁয়া। স্থানীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১৩০ টাকায় এবং আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ১০৫ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, আলুর দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা প্রতি কেজি।

পেঁয়াজ ও আলু

বাজার সূত্রে জানা গেছে, আমদানি করা পেঁয়াজের মধ্যে ভারতীয় পেঁয়াজের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। চীনা, বার্মিজ, পাকিস্তানি ও তুর্কি পেঁয়াজের আমদানি এখনও অনেক কম।

আমদানিকারকরা বলছেন, শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্তে তারা উৎসাহিত হয়েছেন। তবে নতুন করে আমদানি করা পণ্য বাজারে আসতে এবং ভোক্তারা এর সুফল পেতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।

হিলিভিত্তিক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স সততা বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী মো. বাবলু রহমান জানান, তার প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে ৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি চেয়েছে। তিনি বলেন, প্রতি কেজিতে ৪.০-৫.০ টাকা (৫.০ শতাংশ) শুল্ক কমানোয় আমদানিকারকরা আরও উৎসাহিত হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, মাত্র তিন দিন আগে শুল্ক কমানো হয়েছে এবং নতুন আমদানি পণ্য বাজারে আসার পর ভোক্তারা এর সুফল পাবেন।

তিনি বলেন, আমদানির জন্য ডলার সংগ্রহ করা একটি জটিল বিষয়, কারণ বর্তমানে প্রতি ডলারের দাম ১২৪-১২৫ টাকা।

বগুড়াভিত্তিক একজন আমদানিকারক জানান, ভারত থেকে প্রতি টন পেঁয়াজ আমদানির খরচ কমপক্ষে ৭৭২ মার্কিন ডলার। ভারতের সর্বনিম্ন রপ্তানি মূল্য ৫৫০ ডলার প্রতি টন এবং ৪০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশি টাকায় আমদানি খরচ প্রতি কেজি ১০২-১০৪ টাকা, যা শুল্ক কমানোর কারণে ৪.০-৫.০ টাকা কমতে পারে।

সোনামসজিদভিত্তিক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএইচ ট্রেডিংয়ের অংশীদার মো. আবেদুর জানান, তার প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে ২,০০০ টন আলু আনার অনুমতি পেয়েছে।

তিনি বলেন, ২৮ শতাংশের বেশি শুল্কে ভারত থেকে আলু আনা সম্ভব ছিল না।

তিনি বলেন, সরকার আগের ২৫ শতাংশ থেকে শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে এবং ৩.০ শতাংশ নিয়ন্ত্রক শুল্কও প্রত্যাহার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, শুল্ক কমানোর ফলে সর্বনিম্ন আমদানি খরচ প্রতি কেজি ৪৫-৪৬ টাকা হবে। তবে আমদানি করা আলু পেতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলে তিনি জানান।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, গত দুই মাসে ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ এনেছেন - ০.১৮১ মিলিয়ন টন।

তিনি বলেন, শুধু গত ১০ দিনে ১৮,০০০ টন আমদানি করা হয়েছে। অধিকাংশ পেঁয়াজ ভারত থেকে কেনা হয়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, অনেক আমদানিকারক পাকিস্তান, তুরস্ক, চীন ও মিশর থেকে পণ্য আনার জন্য আমদানি অনুমতিপত্র (আইপি) নিয়েছেন; এসব দেশ থেকে এখন পর্যন্ত ৬,০০০ থেকে ৭,০০০ টন পেঁয়াজ কেনা হয়েছে।

তবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভারতে তুলনামূলকভাবে বেশি দামের কারণে গত দুই মাসে মাত্র ৪০ টন আলু আমদানি করা সম্ভব হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত অর্থবছরে মোট ৯৮,০০০ টন আলু আমদানি করা হয়েছে, যা সর্বকালের রেকর্ড।

শ্যামবাজারভিত্তিক একজন ব্যবসায়ী হেদায়েত আলী বলেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে আমদানি সাধারণত ব্যবসায়ীদের ভারত থেকে পণ্য আনতে উৎসাহিত করে।

তিনি বলেন, দেশীয় ও ভারতীয় উভয় ধরনের পেঁয়াজের সরবরাহ এখন ভালো অবস্থায় রয়েছে। অক্টোবর পর্যন্ত, যখন দেশীয় পেঁয়াজের মজুত শেষ পর্যায়ে থাকবে, তখন পর্যন্ত ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) দেশে ৩.৫ মিলিয়ন টন পেঁয়াজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে, আলু উৎপাদন ১০.৬ মিলিয়ন টনে দাঁড়িয়েছে।

দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস অবলম্বনে