ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের মন্তব্য নিয়ে উদ্বেগ বিএনপির

ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। শনিবার দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রতিবেশী দেশ ভারতকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানান।

বিএনপির দলীয় পতাকা

বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ভারত যদি একপেশেভাবে শুধুমাত্র শেখ হাসিনা এবং তার দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে তবে বাংলাদেশের জনগণ তা মেনে নেবে না।

“সামরিক কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠকের পর ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য উদ্বেগজনক। জনগণের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তার মন্তব্য কি উস্কানিমূলক নয়?” প্রশ্ন তোলেন বিএনপি নেতা।

রিজভী আরও বলেন, “ভারতীয় মন্ত্রীর বক্তব্য কি শেখ হাসিনাকে সান্ত্বনা দেওয়ার এবং তাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করার জন্য ভারতের প্রচেষ্টার অংশ? যদি তা না হয়, তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী কেন এভাবে কথা বলছেন?”

উল্লেখ্য, শুক্রবার রাজনাথ সিং ইসরায়েল- হামাস সংঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ‘অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির’ জন্য প্রস্তুত থাকতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।

রিজভী বলেন, “'দানব' শেখ হাসিনাকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ এখন অবাধে চলাফেরা করছে। গ্রেপ্তার বা গুমের ভয় নেই। মানুষ এখন অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। আপনারা (ভারত) কি এতে খুশি নন? ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা কি বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন, মানুষের শান্তিতে বসবাস এবং একটি সার্বভৌম দেশে বসবাসের পক্ষে নন?"

বিএনপি নেতা আরও প্রশ্ন তোলেন, বাংলাদেশ থেকে শেখ হাসিনা যে উৎখাত হয়েছেন সেই সত্য কি ভারত মেনে নিতে পারছে না?

তিনি বলেন, “যদি তাই হয়, তবে এর অর্থ দাঁড়ায়, আপনার কাছে বাংলাদেশের জনগণ এবং তাদের সার্বভৌমত্ব আসলেই সুরক্ষিত নয়। মনে হচ্ছে, আপনার দৃষ্টিতে শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি, শেখ হাসিনা, নিরাপদ। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।”

অনেক অমীমাংসিত সমস্যা থাকা সত্ত্বেও, বাংলাদেশ ভারতের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

"আমরা যেমন ভারতের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করি, তেমনি ভারতেরও আমাদের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বকে সম্মান করা উচিত।"

রিজভী আরও বলেন, ৫ আগস্ট বাংলাদেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নেমে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শেখ হাসিনাকে তাড়িয়ে দিয়েছে, ঠিক যেমন তারা আগে ব্রিটিশদের এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের ও তাড়িয়ে দিয়েছিল।

"বাংলাদেশের জনগণ যেমন দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়ন সহ্য করতে পারে, তেমনি তারা বিদেশি আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলতেও জানে। ভারতের মনে রাখা উচিত যে বাংলাদেশ বীরদের দেশ," বলেন তিনি।

বিএনপি নেতা আরও অভিযোগ করে বলেন, শেখ হাসিনা হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে ভারতে পালিয়ে যান, যখন কোন উপায় ছিল না এবং জনগণ কারফিউ অমান্য করে তার বাসভবন গণভবনের দিকে যাচ্ছিলেন।

“তার একজন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন যে, শেখ মুজিবের মেয়ে পালিয়ে যাবেন না। এখন, শেখ মুজিবের মেয়ে কোথায়? যারা নিজের দেশের মানুষদের ওপর অত্যাচার করেছে, যারা অন্যায়ভাবে মানুষকে বছরের পর বছর আটকে রাখার জন্য অনৈতিক কারাগার তৈরি করেছে, তারা কীভাবে এই দেশ শাসন করবে?" প্রশ্ন তোলেন তিনি।

রিজভী আরও বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন, কারণ যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কোন গণতান্ত্রিক দেশ তাকে আশ্রয় দিতে রাজি নয়।

শেখ হাসিনার একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উক্তি স্মরণ করে তিনি বলেন, “ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে একজন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। যখন হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান, তখন তাকে এমনভাবে স্বাগত জানানো হয়েছিল যেন তিনি একজন কনে।”

রিজভী বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশনের সদস্যদের সঙ্গে শের-ই-বাংলা নগরে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন এবং সংগঠনের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেন।