চাল, মুরগি ও ডিমের দাম বেড়েছে, সবজিতে স্বস্তি

রাজধানীর বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দামে অস্থিরতা বিরাজ করছে। খুচরা পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দামেও দেখা দিয়েছে ঊর্ধ্বগতি। তবে সুখবর হলো, সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। রাজধানীর শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এবং টাউন হল মার্কেট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

নিত্যপণ্যের ছবি

বিক্রেতারা জানান, সাম্প্রতিক বন্যার কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় ত্রাণ সহায়তার জন্য হঠাৎ চালের বিক্রি বেড়ে গেছে। বিশেষ করে মোটা চালের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। এছাড়াও, ধানের দামও সম্প্রতি বেড়েছে। এইসব কারণে খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে।

রাজধানীর তিনটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুই সপ্তাহ আগে যে মোটা চাল (স্বর্ণা ২৮) ৫০-৫৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল, বৃহস্পতিবার তা বিক্রি হয়েছে ৫২-৬০ টাকা কেজি দরে। একইভাবে মিনিকেট চালের দামও কেজিতে ২-৬ টাকা বেড়েছে। ইতিমধ্যে পাইকারি বাজারেও চালের দাম কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে।

কুষ্টিয়া জেলার বাংলাদেশ অটো রাইস মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন জানান, বন্যার কারণে চালের চাহিদা অনেক বেড়েছে। এছাড়াও, ধানের দাম মণ প্রতি (৫০ কেজি) ১০০ টাকা বেড়েছে। এই দুটি কারণে পাইকারি বাজারে চালের দাম বেড়েছে।

মুরগি ও ডিমের দাম ঊর্ধ্বমুখী

বাজারে ব্রয়লার ও সোনালী উভয় জাতের মুরগির দাম বেড়েছে। দুই সপ্তাহ আগে যে ব্রয়লার মুরগি ১৬০-১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল, বৃহস্পতিবার তা বিক্রি হতে দেখা গেছে ১৭০-১৮০ টাকা কেজি দরে। কোথাও কোথাও এর দাম বেড়েছে আরও ১০ টাকা। সোনালী মুরগির দামও বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এর দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫০-২৬০ টাকা কেজি।

এদিকে, দশ দিনের ব্যবধানে বাজারে লাল ব্রয়লার ডিমের দাম ডজন প্রতি ৫ টাকা বেড়েছে। বৃহস্পতিবার লাল ব্রয়লার ডিমের ডজন বিক্রি হয়েছে ১৫৫-১৬০ টাকায়। সাদা ব্রয়লার ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা ডজনে।

আলু ও পেঁয়াজের দাম এখনও চড়া

কয়েক মাস ধরেই বাজারে আলু ও পেঁয়াজের দাম বেশ চড়া। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায় এবং দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকায়।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বর্তমানে আলুর দাম ২৯ শতাংশ এবং দেশি পেঁয়াজের দাম ৩৫ শতাংশ বেশি।

আলু ও পেঁয়াজের দাম কমাতে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আলু আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়াও, আলু আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক এবং পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

সবজির বাজারে স্বস্তি

গত সপ্তাহের তুলনায় বেশ কয়েক ধরনের সবজির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা কমেছে। বেগুন বিক্রি হয়েছে ৭০-৯০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১১০ টাকা। একইভাবে বরবটির দামও কেজিতে ২০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়।

অন্যান্য সবজির মধ্যে করলা, পটল, টমেটো এবং পেঁপের দাম কমেছে। তবে বাকি সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ২০ টাকা কমে বৃহস্পতিবার বিক্রি হয়েছে ১৮০-২০০ টাকা কেজি দরে।

মাছের বাজারে অবস্থা স্থিতিশীল

রুই, তেলাপিয়া এবং পাবদা মাছ আগের দামেই বিক্রি হয়েছে। বৃহস্পতিবার রুই (চাষের) বিক্রি হয়েছে ৩০০-৩৩০ টাকা কেজি, তেলাপিয়া বিক্রি হয়েছে ২০০-২২০ টাকা কেজি এবং পাবদা বিক্রি হয়েছে ১৮০-২০০ টাকা কেজি দরে। তবে ইলিশ মাছের দাম কেজিতে ১৫০-২০০ টাকা কমে বিক্রি হতে দেখা গেছে ১,৫০০-১,৬০০ টাকায়।

রাজধানীর আদাবর এলাকার বাসিন্দা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মাহমুদুল হাসান বলেন, “সবজির দাম কিছুটা কমলেও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেশ চড়া। এসব নিত্যপণ্যের দাম না কমলে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের স্বস্তি নেই।”

প্রথম আলো অবলম্বনে