ডেঙ্গু: হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যু বেড়েছে, কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। চলতি মাসের শুরু থেকেই সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বরের প্রথম ছয় দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির হার দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আগামী মাসগুলোতে আরও ডেঙ্গু বিস্তারের আশঙ্কা জাগাচ্ছে।

এডিস মশা, ফাইল ছবি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যমতে, সেপ্টেম্বরের প্রথম ছয় দিনে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কমপক্ষে ৯ জন মারা গেছেন এবং ১,৯৬৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় আরও একজন মারা গেছেন এবং ১১৮ জন নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান বর্ষায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা এবং সচেতনতার অভাবের কারণেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলন এবং সরকারের পতনের পর গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাদের এলাকায় মশক নিধনে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

তবে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান স্বীকার করেছেন যে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কয়েকদিনের জন্য মশক নিধন কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছিল।

তিনি আরও জানান, পূর্ববর্তী সরকারের পতনের পর ওয়ার্ড কাউন্সিলররা আত্মগোপনে থাকায় স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করে জনসচেতনতা মূলক প্রচারণা পরিচালনার চেষ্টা করছে সিটি কর্পোরেশন। পাশাপাশি নিয়মিত লার্ভিসাইডিং এবং ফগিং কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘খুব শীঘ্রই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ জিএম সাইফুর রহমান বলেন, যদি তাৎক্ষণিকভাবে মশার বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তাহলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়বে।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, প্রাক-বর্ষা এবং বর্ষার শুরুতে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে এ বছর ডেঙ্গু সংক্রমণ দেরিতে তার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাবে। তিনি আশঙ্কা করেন, অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু বাড়তে থাকবে।

এই কীটতত্ত্ববিদ আরও জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু সেরোটাইপ-২ এর কারণে বেশিরভাগ মৃত্যু এবং হাসপাতালে ভর্তির ঘটনা ঘটছে। সেরোটাইপের পরিবর্তনের কারণে মৃত্যু এবং হাসপাতালে ভর্তির ঘটনা আরও বাড়তে পারে বলে তিনি জানান।

এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৪,০৬৮ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৩,৮০১ জন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ২,৪০৮ জন, বরিশালে ১,৬১৬ জন এবং খুলনায় ১,০৩০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশন এবং স্থানীয় সরকার পরিষদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।