ইসলামী ব্যাংক থেকে তুলে নিয়েছে ৯০ হাজার কোটি টাকা!

দেশের শীর্ষস্থানীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ থেকে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ ৯০,০০০ কোটি টাকারও বেশি ঋণ তুলে নিয়েছে, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের অর্ধেকেরও বেশি। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে ব্যাংকটির নব-নিযুক্ত চেয়ারম্যান মো. ওবায়দ উল্লাহ আল মাসুদের নেতৃত্বে পরিচালনা পর্ষদের এক সভার পর সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।

ইসলামী ব্যাংকের লোগো

আগস্টের শেষে ইসলামী ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ১.৮০ লাখ কোটি টাকা।

“এই গ্রুপটি তাদের নামে এবং বেনামী অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ব্যাংকের মোট ঋণের ৫০ শতাংশেরও বেশি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে, যদিও সঠিক পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা হচ্ছে,” মাসুদ বলেন।

তিনি আরও জানান, ঋণের তথ্য চূড়ান্ত করতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় লাগবে। ব্যাংকটিতে ঘটে যাওয়া সকল ধরনের অনিয়ম তদন্তে ইতোমধ্যে তিনটি অডিট ফার্ম নিয়োগ করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এস আলম গ্রুপ আটটি ব্যাংকের পুরোপুরি বা আংশিক নিয়ন্ত্রণ দখল করে নিয়েছিল।

নিয়োগ এবং ঋণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে এই গ্রুপটির বিরুদ্ধে। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, এস আলম ব্যাংকিং খাত থেকে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে।

এই আটটি ব্যাংক হলো: ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।

"এস আলম গ্রুপ তাদের সম্পদের মূল্য কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছে এবং ব্যাংক এখন এই সম্পত্তির পুনর্মূল্যায়ন করছে," নব-নিযুক্ত চেয়ারম্যান মাসুদ বলেন।

তিনি আরও বলেন, “ঋণের তুলনায় জামানতের পরিমাণ অপ্রতুল, তাই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে এস আলম গ্রুপের অন্যান্য সম্পত্তি শনাক্ত করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে।”

মাসুদ আশা প্রকাশ করেন যে বছরের শেষ নাগাদ ব্যাংকটি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন যে জড়িত সকলের বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং কেউই রেহাই পাবে না।

তিনি আরও জানান, এখন থেকে ইসলামী ব্যাংকে ব্যবসায়িক কার্যক্রম এবং ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা থাকবে না।

মাসুদ ব্যাংকটির পুনরুদ্ধারের জন্য একটি রোডম্যাপও তুলে ধরেন। প্রথম ধাপ, যা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে, তার মূল লক্ষ্য হবে সমালোচনামূলক সমস্যাগুলি চিহ্নিত করা এবং সমাধান করা।

ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান জানান, ২০২৫ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপে ব্যাংকটিকে পুরোপুরি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, এবং ২০২৭-২০২৯ সালের মধ্যে অগ্রগতি এবং প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।