ড. ইউনূস: নীরব থাকাই শেখ হাসিনার জন্য শ্রেয়

ভারতে নির্বাসিত জীবন কাটানোর সময়, বিচারের জন্য দেশে ফিরিয়ে আনার আগ পর্যন্ত, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার “নীরব” থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে তিনি এ কথা বলেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও শেখ হাসিনা

গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন। “বাংলাদেশ যতদিন চায়, ততদিন যদি ভারত তাকে (হাসিনা) আশ্রয় দিতে চায়, তাহলে শর্ত হলো তাকে নীরব থাকতে হবে,” ৮৪ বছর বয়সী ইউনূস প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়াকে বলেন।

“ভারতে বসে থেকে তিনি (হাসিনা) কথা বলছেন, নির্দেশনা দিচ্ছেন। এটা কারোই পছন্দ হচ্ছে না। এটা আমাদের জন্য বা ভারতের জন্য মঙ্গলজনক নয়।”

৭৬ বছর বয়সী শেখ হাসিনা এক মাস আগে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। এর আগে বিক্ষোভকারীরা তার বাসভবন ঘেরাও করে রাখলে ১৫ বছরের লৌহকঠিন শাসনের অবসান ঘটে।

ভারতে পৌঁছানোর এক সপ্তাহ পর, হাসিনা এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জনগণকে ঢাকায় জড়ো হওয়ার আহ্বান জানান। ১৯৭৫ সালে তার বাবা, স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের বার্ষিকী পালনের জন্য তিনি এ আহ্বান জানান।

ড. ইউনূস ক্ষমতা গ্রহণ করার পর শেখ হাসিনার এ মন্তব্যকে তার দল আওয়ামী লীগের কর্মীদের উত্তেজিত করে তোলা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর এক প্ররোচনামূলক প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়।

তবে এক পাল্টা বিক্ষোভের মাধ্যমে এ প্রচেষ্টা বানচাল করা হয়। সন্দেহভাজন আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা।

হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের কাছে কোনো আনুষ্ঠানিক আবেদন করা হয়েছে কিনা, তা স্পষ্ট করেননি ইউনূস। তার সরকার হাসিনার প্রত্যাবর্তন দাবি করে কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে বিরত থাকার চেষ্টা করছে।

হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ছিল। এর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক বিরোধীদের গণহারে আটক এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।

ছাত্র নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের সময় পুলিশের কার্যক্রমে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুর ঘটনায় শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে বহু ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ আন্দোলনের মাধ্যমেই শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন।

শেখ হাসিনার পতনের এক মাস পূর্তি এবং আন্দোলনে নিহত ‘শহীদদের’ স্মরণে বৃহস্পতিবার ঢাকায় ‘শহীদি মার্চ’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর ইউনূস ইউরোপ থেকে ফিরে আসেন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। গণতান্ত্রিক সংস্কার বাস্তবায়নে এ সরকারের সামনে রয়েছে প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জ।

ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে অগ্রণী ভূমিকা রাখার জন্য ২০০৬ সালে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। তার এই কার্যক্রম লাখ লাখ বাংলাদেশিকে চরম দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

তার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে কখন এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ঘোষণা দেয়নি।