আ. লীগের শীর্ষ নেতা, পুলিশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার সন্ধান নেই

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত অনেক প্রাক্তন মন্ত্রী এবং পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা এখনও পলাতক রয়েছেন। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দলটির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের দলীয় পতাকা

গত ৫ আগস্ট পদত্যাগের পর দেশত্যাগ করা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৯৪টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে আটটি গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এবং ৭৮টি হত্যা মামলা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আরাফাতসহ আওয়ামী লীগের অধিকাংশ শীর্ষ নেতা এবং সাবেক মন্ত্রী এখনও পলাতক রয়েছেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান, ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার সাবেক প্রধান হারুন অর রশিদ এবং ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারসহ হত্যা বা হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ কর্মকর্তা পলাতক রয়েছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বুধবার দুটি হত্যা মামলায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এবং এ কে এম শহীদুল হককে যথাক্রমে আট দিন এবং সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

একই দিনে, ঢাকার মহানগর হাকিম আক্তারুজ্জামানের আদালত হাজারীবাগ থানায় দায়ের করা অপহরণ ও চাঁদাবাজির মামলায় ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফিকে পুলিশ হেফাজতে রিমান্ডে প্রেরণ করেছেন।

ঢাকার উপকণ্ঠে আশুলিয়ায় হত্যা ও লাশ পোড়ানোর ঘটনায়ও তিনি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনেক সাবেক মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা এবং সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, শেখ হাসিনার বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আরিফ খান জয়সহ শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এছাড়াও, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর সভাপতি এবং সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে এবং দলটির সর্বস্তরের অধিকাংশ নেতা-কর্মী পলাতক রয়েছেন অথবা জনসম্মুখে আসা এড়িয়ে চলছেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এ এফ এম বাহাউদ্দিন নাসিম মঙ্গলবার ফোনে বলেন, ‘আমরা সারা দেশের আওয়ামী লীগের সকল নেতা-কর্মীদের নিরাপদে থাকার জন্য এবং ধৈর্য ধরার জন্য বার্তা পাঠিয়েছি। এখন সময় নিরাপদে থাকার। এ মুহূর্তে রাস্তায় নামার কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই এবং আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’

তিনি অভিযোগ করেন, অনেক নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কোনো নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল নয়। আমরা বলব না যে, আমরা সমালোচনার ঊর্ধ্বে এবং আমাদের কোনো ভুল নেই। আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করছি।’

তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, বর্তমানে আওয়ামী লীগের লোকজনের জন্য কোনো মানবাধিকার প্রযোজ্য নয়।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় ১৬ আগস্ট প্রকাশিত এক প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র বিক্ষোভে প্রায় ৬৫০ জন নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের সংস্থাটির মতে, ১৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৪০০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, আর ৫ ও ৬ আগস্ট নতুন করে শুরু হওয়া বিক্ষোভে প্রায় ২৫০ জন নিহত হন।

হাসিনা সরকারের পতনের আগে, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিচার গুলিতে অধিকাংশ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

প্রাক্তন মন্ত্রীদের গ্রেপ্তার এবং পলাতক পুলিশ কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করার জন্য পুলিশ সদর দপ্তর কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা তা জানতে সরাসরি এবং খুদে বার্তার মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলেও, কোনও জবাব পাওয়া যায়নি।

এদিকে, সিআইডি এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, তার স্ত্রী ও দুই পুত্র এবং সালমান এফ রহমানসহ কয়েকজন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে।

অভিযোগ রয়েছে, সোনালী, অগ্রণী, জনতা এবং রূপালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এস আলম ও তার পরিবার ১,১৩,২৪৫ কোটি টাকা এবং সালমান এফ রহমান ৩৩,৪৭০ কোটি টাকা পাচার করেছেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক সামরিক কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের
সাবেক চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. সোহেলকেও রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত ৬০ জন প্রাক্তন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, আইনপ্রণেতা, আমলা, পুলিশ কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীর উপর আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আদালত।

এই তালিকায় রয়েছেন এ.এইচ. মাহমুদ আলী, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং হাসানুল হক ইনু।

নিউ এজ অবলম্বনে