সংকটগ্রস্ত ৮ ব্যাংকে আন্তঃব্যাংক ঋণ সহায়তা

সংকটগ্রস্ত ৮ ব্যাংককে সীমিত পরিসরে জামানত সহায়তা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এ তথ্য জানিয়েছেন। দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকা এই আটটি ব্যাংককে আন্তঃব্যাংক ঋণ ব্যবস্থার মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া হবে।’

ব্যাংকের লোগো

তিনি আরও বলেন, "জামানতের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে টাকা ছাপাবে না। বরং, আন্তঃব্যাংক মানি মার্কেটের মাধ্যমে ঋণ প্রদানে অন্যান্য ব্যাংকগুলোকে আশ্বস্ত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের গ্যারান্টি প্রদান করবে।"

এসময় গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য আমানতকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের ব্যাংকিং খাত পুনরুদ্ধারে তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’

‘একটি টাস্কফোর্স আন্তর্জাতিক মানের ব্যাংকিং খাত তৈরির জন্য কাজ করবে, অপরটি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তিশালী করার জন্য এবং তৃতীয়টি ঋণখেলাপীদের কাছ থেকে সম্পদ উদ্ধারের জন্য কাজ করবে,’ বলেন তিনি।

‘এই টাস্কফোর্সগুলোতে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা উভয়ই থাকবেন।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘ব্যাংকিং খাত পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করতে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগবে। তবে এক বছরের মধ্যে স্থিতিশীলতা অর্জন করা সম্ভব হবে।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘৮টি ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে।’

‘এই ক্ষতি পূরণের জন্য প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে, যা সরকারের পক্ষে অবাস্তব হবে কারণ এতে মুদ্রাস্ফীতি ২৫ শতাংশের উপরে উঠে যাবে,’ তিনি বলেন।

‘একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে, ভালো অবস্থানে থাকা ব্যাংকগুলো আমানতকারীদের তাৎক্ষণিক চাহিদা মেটাতে সংকটগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে সীমিত নগদ অর্থ সরবরাহ করবে।’

আমানতকারীদের শুধুমাত্র প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা তোলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলো পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই ব্যাংকগুলোর সমস্যা পুরো ব্যাংকিং খাতকে অস্থিতিশীল করবে না।’

‘খাতটি সচল থাকবে এবং মৌলিকভাবে সুস্থ থাকবে,’ তিনি বলেন।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, সকল ব্যাংকের নিরীক্ষা করা হবে এবং নতুন করে পরিচালন পদ্ধতি বিবেচনা করা হবে।

‘প্রয়োজনে ব্যাংকগুলোকে একীভূত বা লিক্যুইডেট করা হতে পারে,’ তিনি বলেন।

গভর্নর আরও জানান, বৃহৎ ঋণখেলাপীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে এবং তাদের দেশীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে।

‘বিশ্বব্যাংক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের সহযোগিতায় বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ উদ্ধারের প্রচেষ্টা চলছে।’

তিনি বলেন, ‘পাচার হওয়া অর্থের বেশিরভাগই যুক্তরাজ্য, দুবাই, সিঙ্গাপুর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং এই তহবিল উদ্ধারে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।’

৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর, ৮টি বেসরকারি ব্যাংক বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছে।

এই ব্যাংকগুলি হলো - ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।

এই ব্যাংকগুলি বিভিন্ন সমস্যার কারণে নগদ অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে লড়াই করছে।

গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক শেষে, বাংলাদেশ ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সেলিম আরএফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমানে বিনিময় হার প্রায় ১২০ টাকা এবং তারা এই হারেই পরিচালিত হবে।’

‘কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম ১২১-১২২ টাকা,’ তিনি বলেন।

‘ডলার বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। এই মাসে প্রত্যাশিত রেমিট্যান্স ২.৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি,’ তিনি বলেন।

‘চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে এলসি খোলা কমে গেছে। বাজারে এখন ডলারের কোনো ঘাটতি নেই এবং প্রয়োজন অনুযায়ী এলসি খোলা যেতে পারে,’ তিনি আরও বলেন।

‘তবে, চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ১.৫ বিলিয়ন থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের অর্থ আটকে আছে, যা আগামী ছয় মাসের মধ্যে সমাধান হবে বলে আমরা আশা করছি,’ তিনি বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত নীতিগত হার বাড়তে থাকবে। আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে এটি ১০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।’