বাংলাওয়াশ পাকিস্তান, টাইগারদের ইতিহাস

শেষ হলো প্রতীক্ষার প্রহর। বল গড়াল মাঠে। বাংলাদেশ তুলে নিলো স্বপ্নের জয়। আজ মঙ্গলবার দ্বিতীয় টেস্টের পঞ্চম ও শেষ দিনে পাকিস্তানকে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে টাইগাররা। নাজমুল হোসেন শান্তর দল এবার জিতেছে ছয় উইকেটে। রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচে জয় ১০ উইকেটে। টানা দুই জয়ে সিরিজ জয় তো বটেই, প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ।

রান তাড়ায় দারুণ সূচনা এনে দিয়েছেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার। ছবি: এক্স

সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। চতুর্থ দিনেও ভালোই ভুগিয়েছে। বৃষ্টিভেজা টেস্টে গতকালই জয়ের সুবাস পাচ্ছিল বাংলাদেশ। ১৮৫ রানের লক্ষ্য পায় টাইগাররা। রান তাড়ায় দুর্দান্ত শুরু করে সফরকারীরা। চতুর্থ দিনে বিনা উইকেটে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪২ রান করে বাংলাদেশ। এরপরই আলোকস্বল্পতায় বন্ধ হয়ে যায় খেলা। টেস্ট গড়ায় পঞ্চম দিনে।

এদিন জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে সমীকরণ ছিল আরও ১৪৩ রানের। লক্ষ্যে পৌঁছাতে টাইগারদের খরচ করতে হলো চার উইকেট। রান তাড়ায় সম্মিলিত অবদান রাখলেন ব্যাটাররা। যদিও ব্যক্তিগত ফিফটি পাননি কেউ। ৫৮ রানে ভাঙে শুরুর জুটি। ৩৯ বলে ৪০ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে বিদায় নেন ওপেনার জাকির হাসান। তার সঙ্গী সাদমান ইসলাম ফেরেন ২৪ রানে।

এরপর জুটি গড়েন অধিনায়ক শান্ত ও মুমিনুল হক সৌরভ। ৩৮ রানে আউট হন শান্ত। মুমিনুলের ব্যাট থেকে আসে ৩৪ রান। শেষ দিকে মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানের অবিচ্ছেদ্য জুটির ওপর দাঁড়িয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। মুশি ২২ ও সাকিব ২১ রানে অপরাজিত ছিলেন। তবে প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করা লিটন দাস হয়েছে ম্যাচ সেরা। পাকিস্তানের পক্ষে চার উইকেট নেন দলটির চার বোলার।

বাংলাদেশের ইতিহাস গড়ার উপলক্ষ এনে দিয়েছেন বোলাররা। আরেকটু ছোট করে বললে পেসাররা। প্রথমবারের মতো টেস্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসে প্রতিপক্ষের ১০ উইকেট নিয়েছেন টাইগার পেসাররা। দাপুটে বোলিংয়ে পাকিস্তানকে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭২ রানে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন তারা। প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকরা করে ২৭৪ রান।

বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস থামে ২৭৪ রানে। লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ঝোড়ো শুরু করে টাইগাররা। বিনা উইকেটে সাত ওভারে ৪২ রান করে তারা। প্রকৃতি বাধা হয়ে না দাঁড়ালে গতকালই হয়তো জিততে পারতো টাইগাররা। এরপর কালো মেঘে ছেঁয়ে যায় রাওয়ালপিন্ডির আকাশ। পাকিস্তানের পারফরম্যান্সের মতোই প্রকৃতি ডুবে যায় অন্ধকারে।

তাতে দিনের খেলা বন্ধ হলেও বাংলাদেশের জয়ের আকাশে সম্ভাবনা উজ্জ্বলই থাকে। যে সম্ভাবনা নিয়ে গতকাল দিনের খেলা শেষ করেছিল ঠাইগাররা আজ সেটির চূড়ান্ত পরিণতি দিয়েছে তারা। ১৫ বছর পর দেশের বাইরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করল তারা। প্রথমবার ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে তাদেরই ধবলধোলাই করেছিল টাইগাররা।

বিপরীতে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয়বার ঘরের মাঠে ধবলধোলাই হলো পাকিস্তান। প্রথমবার ২০২২ সালে এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাদের। সেবার তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ইংল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয় পাকিস্তান (৩-০)।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান: ২৭৪/১০ ও ১৭২/১০।
বাংলাদেশ: ২৬২/১০ ও ১৮৫/৪।
ফল: বাংলাদেশ ৬ ‍উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: লিটন দাস (বাংলাদেশ)।
সিরিজ: দুই ম্যাচের সিরিজ বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে জয়ী।
সিরিজ সেরা: মেহেদি হাসান মিরাজ (বাংলাদেশ)।