২১ জেলায় এখনও জেলা প্রশাসক নেই

২৫ জেলায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) প্রত্যাহারের ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও নতুন ডিসি নিয়োগ দিতে পারেনি সরকার। ফলে এসব জেলায় প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। গত ২০ আগস্ট ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, কক্সবাজারসহ ২৫টি জেলার ডিসিদের প্রত্যাহার করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর এবং অন্যান্য দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। তবে এখনও পর্যন্ত এসব জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ না দেওয়ায় প্রশাসনিক কাজে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। বন্যার কারণে চাঁদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং মৌলভীবাজারের ডিসিরা তাদের কর্মস্থলেই রয়েছেন।

বাংলাদেশ সরকারের লোগো

জেলা প্রশাসক একজন জেলার প্রশাসনের প্রধান। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা তদারকি এবং জনসাধারণের জন্য কার্যকর পরিষেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ডিসির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে জেলা পরিষদ এবং পৌরসভার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি উপজেলা পরিষদের দায়িত্ব পালনকারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) অতিরিক্ত দায়িত্ব তদারকি করার জন্য ডিসিদের কর্মবোঝা বহুগুণ বেড়েছে।

২১টি জেলায় প্রত্যাহার হওয়া ডিসিদের স্থলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকরা দায়িত্ব পালন করছেন। বন্যার কারণে বদলি হওয়া চারজন ডিসিকে তাদের পূর্বের কর্মস্থলেই থাকতে হয়েছে।

সূত্র জানায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগের জন্য যোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা করার জন্য সময় প্রয়োজন, তাই তাৎক্ষণিকভাবে ডিসি নিয়োগ দিতে পারছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন যুগ্মসচিব বলেন, “কার্যত সরকার পূর্ববর্তী সরকারের তৈরি করা তালিকা অনুসারে নতুন ডিসি নিয়োগ দিতে চায় না।”

তিনি আরও বলেন, “হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের তৈরি করা তালিকাটিতে পূর্ববর্তী সরকারের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।”

সাধারণত সরকার বিদ্যমান ডিসিদের বদলি করার আগে নতুন ডিসি নিয়োগ দেয়। কখনও কখনও দুটি কাজ একসঙ্গেও করা হয়।

“তবে, কার্যত সরকার বিকল্প তালিকা প্রস্তুত না করেই প্রায় অর্ধেক জেলার ডিসিদের বদলির নির্দেশ দিয়েছে,” বলেন ওই কর্মকর্তা।

গত ৫ আগস্ট হাসিনার সরকার পতনের পর বেশ কয়েকটি জেলা প্রশাসক এবং ইউএনও অফিসে হামলা হয়। কিছু কর্মকর্তাকে তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করতে হয়।

কার্যত সরকার গঠনের পরপরই বেশ কয়েকজন ডিসি বদলি চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের শাসনামলে যারা অবহেলিত ছিলেন বলে মনে করেন, তারা ডিসি হওয়ার জন্য তদবির শুরু করেন।

এরপর সরকার ডিসিদের জেলা পরিষদ ও পৌরসভার প্রশাসক এবং ইউএনওদের উপজেলা পরিষদের দায়িত্ব প্রদানের একদিন পরই ২৫ জন ডিসিকে বদলি করে।

সরকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালনা পর্ষদও ভেঙে দিয়েছে।

ফলে, এসব প্রতিষ্ঠান তদারকি এবং নতুন কমিটি গঠনের দায়িত্ব ডিসিদের ওপর পড়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডিসি বলেন, “বর্তমানে কোন আইনপ্রণেতা এবং স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি না থাকায় আমাদেরকে সকল বিষয়ই দেখভাল করতে হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন মহল থেকে টেলিফোনে হুমকিও আসছে। এসব মিলিয়ে আমাদের ওপর চাপ অনেক বেশি।”

তিনি আরও বলেন, “এছাড়াও বদলির একটা আতঙ্ক কাজ করছে। কখন কার বদলি হয়ে যাবে বলা যাচ্ছে না।”

বেশ কয়েকজন ডিসি জানান, “বদলির এই সময়ে” তারা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। কারণ এতে তাদের স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তির জন্য জটিলতা তৈরি হতে পারে।

সম্প্রতি বদলি হওয়া একজন ডিসি বলেন, “তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে স্কুল পরিচালনা পর্ষদ গঠন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”

তিনি বলেন, “আমি যদি কমিটি গঠন করতাম তাহলে তা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হতো। কারণ আমাকে পূর্ববর্তী সরকারের অনুগত বলে হয়।”

আরেকজন ডিসি বলেন, “ডিসিদের ব্যাপক হারে বদলির ফলে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। বদলির ভয়ে রুটিন কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। বাস্তবে যারা বদলি হয়েছেন তারাই এখন ভালো আছেন।”

ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের একজন কর্মকর্তা বলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ক্রীড়া সংগঠনের জন্য কমিটি গঠন নিয়ে প্রতিদিনই তাদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে, ‘বদলি নিয়ে অনিশ্চয়তার’ কারণে কোন নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না।”

নতুন ডিসি নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেসুর রহমান বলেন, “খুব দ্রুত নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে।”

ডেইলি স্টার অবলম্বনে