৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র জমা দিতে হবে, নইলে অবৈধ ঘোষণা

গত ১৫ বছরে বৈধভাবে ইস্যু করা সকল আগ্নেয়াস্ত্র এবং গোলাবারুদ আগামী মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) এর মধ্যে নিকটস্থ থানায় জমা দিতে হবে। অন্যথায়, লাইসেন্সধারীদের কাছে থাকা এসব অস্ত্র অবৈধ বলে গণ্য করা হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লোগো

সরকার বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) থেকে সারাদেশে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে যৌথ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লাইসেন্স স্থগিত হওয়া অস্ত্রসহ সকল অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে সেনাবাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, র‍্যাব এবং আনসার এই অভিযানে অংশগ্রহণ করবে। এ বিষয়ে আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

অভিযান কীভাবে পরিচালিত হবে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী (অব.) লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অভিযান চলাকালীন এবং গ্রেপ্তারের সময় নিজেদের পরিচয় দিতে হবে। কোনোভাবেই কাউকে পরিচয় না দেখিয়ে গ্রেপ্তার করা যাবে না।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সকল জেলা প্রশাসককে ২ সেপ্টেম্বর পুলিশ সুপার, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, এবং গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সদস্যদের নিয়ে একটি মূল কমিটির সভা আহ্বান করার নির্দেশ দিয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, সভায় স্থগিত লাইসেন্সের তালিকা পর্যালোচনা করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিগত ১৫ বছরে বেসামরিক নাগরিকদের দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে।

আজ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে যেন অস্ত্র লাইসেন্সধারীদেরকে এসএমএসের মাধ্যমে তাদের আগ্নেয়াস্ত্র এবং গোলাবারুদ নিকটস্থ থানায় জমা দেওয়ার জন্য জানানো হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (গোপন) মো. কামরুল আহসান বলেন, ‘৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যেসব লাইসেন্সধারী তাদের আগ্নেয়াস্ত্র থানায় জমা দেবেন না, সেগুলো অবৈধ অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত হবে।’

তিনি লাইসেন্সধারী আগ্নেয়াস্ত্র মালিকদের আইনি ব্যবস্থা এড়াতে সময়সীমার মধ্যে তাদের আগ্নেয়াস্ত্র থানায় জমা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান।

পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৫০,৩১০ জন লাইসেন্সধারী আগ্নেয়াস্ত্র মালিক রয়েছেন। তবে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কতটি আইনসম্মত অস্ত্র ইস্যু করা হয়েছিল তার প্রকৃত পরিসংখ্যান এখনও পাওয়া যায়নি।

এসবির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করে এই সংবাদপত্রকে বলেন, ‘আমরা তথ্যভাণ্ডার হালনাগাদ করার জন্য কাজ করছি, এবং আশা করছি এক বা দুই দিনের মধ্যে কাজটি শেষ করতে পারব।’

গতকাল পুলিশ সদর দপ্তর এক নির্দেশনা জারি করে জানিয়েছে যে সাম্প্রতিক সহিংসতার সময় বিভিন্ন থানা থেকে লুট হওয়া সকল অস্ত্র এবং গোলাবারুদ আগামী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ফেরত দিতে হবে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান বলেন, ‘বিভিন্ন থানা এবং কার্যালয় থেকে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’

গতকাল পর্যন্ত সাম্প্রতিক আন্দোলেনের সময় পুলিশ স্টেশন এবং অফিস থেকে লুট হওয়া বিভিন্ন ধরনের মোট ৩,৮৮০ টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২,৮৬,৩৫৩টি গুলি, ২২,২০১টি কাঁদানে গ্যাসের শেল, এবং ২,১৩৯টি স্টান গ্রেনেড উদ্ধার করেছে।

সাম্প্রতিক গণবিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর ব্যপকভাবে গুলিবর্ষণ করলে সারাদেশে পুলিশ স্টেশনের ওপর বিভিন্ন আক্রমণ এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এতে অনেক ব্যক্তি নিহত হন।

বিক্ষোভে ৫৫০ জনেরও বেশি মানুক নিহত হন, যার মধ্যে অনেক ছাত্র ছিলেন। পরিণামে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এই সহিংসতায় কমপক্ষে ৪৩ জন পুলিশ কর্মকর্তাও প্রাণ হারান।

ডেইলিস্টার অবলম্বনে