গত তিন বছরে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি ২,৫০০ জনেরও বেশি কর্মীকে চাকরিচ্যুত করেছে এবং অনেককেই জোরপূর্বক পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

logo brac bankব্র্যাক ব্যাংকের লোগো

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পদত্যাগে বাধ্য করতে বা অধস্তনদের চাকরিচ্যুত করতে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পক্ষপাতিত্ব, কর্তৃত্বের অপব্যবহার এবং স্বেচ্ছাচারিতার ঘটনা পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এই অভিযোগগুলো তদন্ত করার জন্য ২৫শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বিশেষ দল ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পরিদর্শন করে।

ব্যাংকের নথিপত্র অনুসারে, এই সময়ে ২,৫৫৩ জন কর্মী চাকরি ছেড়েছেন, যার মধ্যে ৯৫ শতাংশ বা ২,৪১৮ জনকে ‘স্বেচ্ছায় পদত্যাগ’ হিসেবে দেখানো হয়েছে।

তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ব্যাংকের ইতিহাস বিবেচনা করে দেখা গেছে যে, তথাকথিত স্বেচ্ছায় পদত্যাগের অনেকগুলোই আসলে জোরপূর্বক ছিল।’

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, চাকরি হারানোর ভয়ে কর্মীদের পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে - এমন অভিযোগের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য।

বিস্তারিত তথ্য অনুসারে, ব্র্যাক ব্যাংক ২০২১ সালে ৭২০ জন, ২০২২ সালে ৯৯৮ জন, ২০২৩ সালে ৮৩৫ জন এবং ২০২৪ সালে ১১৫ জন কর্মীকে বিভিন্ন কারণে চাকরিচ্যুত করেছে।

তবে পরিদর্শনে ব্যাংকের কর্মক্ষমতা মূল্যায়য়ন পদ্ধতিতে অসঙ্গতি ধরা পড়ে। যারা টানা চার বছর ধরে সেরা পারফর্মার হিসেবে মূল্যায়িত হয়ে আসছিলেন, তাদের হঠাৎ করেই এক বছরের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে - যা ‘গ্রহণযোগ্য নয়’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

এছাড়াও, এই চাকরিচ্যুতিগুলো পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়াই করা হয়েছে, যা নীতিবহির্ভূত।

প্রতিবেদনে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে বলা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়াই রিটেইল, এসএমই এবং কার্ডের মতো বিভিন্ন বিভাগে ভিন্ন ভিন্ন কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করছে তারা।

একীভূত মূল্যায়ন ব্যবস্থার অভাব এবং বিভাগীয় প্রধানদের দেওয়া বিচারিক ক্ষমতার কারণে মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় ব্যক্তিগত পক্ষপাতিত্বের আশঙ্কা রয়েছে - প্রতিবেদনে এমনটি উল্লেখ করে বলা হয়, ‘পৃথক মূল্যায়ন ব্যবস্থার ফলে ব্যাংকের সামগ্রিক জনবল ব্যবস্থাপনা বিঘ্নিত হচ্ছে, যা বিশৃঙ্খলা ও অকার্যকরতার সৃষ্টি করছে।’

পূর্বতন কর্মীরা ‘পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য তাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে’ বলে অভিযোগ করে বলেন, ‘যারা রাজি হয়নি তাদের চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেওয়া হয়েছে।’

ব্যাংকের চাকরিচ্যুতির পরিসংখ্যানও এই অভিযোগকে সমর্থন করে, কারণ অনেক কর্মী ভয়ে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন যে, চাকরিচ্যুত হলে তাদের ভবিষ্যতের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা ক্ষুন্ন হতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনের অভিযোগ অস্বীকার করে ব্র্যাক ব্যাংকের যোগাযোগ ও জনসংযোগ প্রধান ইকরাম কবির বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে ব্যাংক প্রায় ৪৬০ জন কর্মীকে চাকরিচ্যুত করেছে। এদের বেশিরভাগই বিক্রয় বা লক্ষ্যভিত্তিক বিভাগের যারা ‘দুর্বল পারফরম্যান্স’ অথবা ‘শৃঙ্খলাজনিত সমস্যার’ কারণে চাকরিচ্যুত হয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া সত্ত্বেও কিছু কর্মী ভালো করতে পারেননি। এছাড়াও ‘জালিয়াতি, চুরি বা নারী হয়রানির’ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগেও কিছু কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সার্কুলার লঙ্ঘনের বিষয়ে পরিদর্শনে দেখা গেছে, ‘ব্র্যাক ব্যাংক ১,৫৪৮ জন কর্মীকে একই শাখা বা বিভাগে তিন বছরের বেশি সময় ধরে রেখেছে, এমনকি কেউ কেউ ১৯ বছর ধরে একই বিভাগে কর্মরত রয়েছেন।’

এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘প্রধান কার্যালয়ে বিশেষায়িত কাজের জন্য বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা প্রয়োজন।’

তবে যখন পরিদর্শন দল এলোমেলোভাবে নির্বাচিত ২৮ জন কর্মকর্তার নিয়োগপত্র পর্যালোচনা করে, তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এসব কর্মীদের ‘বিশেষজ্ঞ’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কোনো প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সার্কুলারের বিধান মেনে চলতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অনীহা প্রকাশ করেছে।’

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা একটি নির্দিষ্ট ঘটনায় এবিএম সিদ্দিকের চাকরিচ্যুতির কথা বলা হয়েছে, যার বিরুদ্ধে ‘ঋণের আবেদনে জালিয়াতির’ অভিযোগ আনা হয়েছিল।

ব্যাংকের তদন্ত প্রধান মোহাম্মদ হাফিজুল ইসলাম, যিনি ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে একই বিভাগে কর্মরত রয়েছেন, তিনি একই বিভাগের কর্মকর্তা কাশফিয়া আশফাককে মৌখিকভাবে তদন্তের দায়িত্ব দেন। অথচ তার নিয়োগের জন্য কোনো আনুষ্ঠানিক অনুমোদন ছিল না।

সিদ্দিকের চাকরিচ্যুতির দিকে পরিচালিত তদন্ত প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে একই বিভাগে কর্মরত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অধস্তনদের জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করতে বা চাকরিচ্যুত করতে ‘কর্তৃত্ব এবং স্বেচ্ছাচারিতা’ প্রদর্শন করেছেন।

প্রতিবেদনে ব্র্যাক ব্যাংককে 'বিষয়টি পুনরায় তদন্ত করে এবং স্বেচ্ছাচারিতার জন্য তদন্ত প্রধান হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের' নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এখনো এই নির্দেশনা মেনে চলেনি।

নিউ এজ অবলম্বনে

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.