কিপিং না ব্যাটিং, কোনটায় বেশি গুরুত্ব দিবেন মুশফিক?

হায়দরাবাদ টেস্টের পর এটাই বোধহয় বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হওয়া প্রশ্ন। মুশফিকুর রহিমের কিপিং দেখে দর্শকরা যতো বিরক্ত হচ্ছেন, তার ব্যাটিং দেখে ভাসছেন সে তুলনায় অনেক বেশি মুগ্ধতায়। এ রকম অবশ্য আরো আগে থেকেই হচ্ছে। প্রশ্নটাও এতোদিনে বেশ পুরোনো।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ার আগে আজ সংবাদ সম্মেলনেও মুশফিকের কাছে প্রশ্নটা গেলো। উত্তরে মুশফিক যা বললেন, তাতে মনে হলো কিপিংয়ের মায়াটা তিনি ছাড়তে পারছেন না। ব্যাটিংয়ে তিনি যতোটা মুগ্ধকর, চেষ্টা করছেন কিপিংয়েও তেমন হয়ে উঠতে।

মুশফিক বলেন, ‘দেখুন, আমি সব সময় সেটাই করতে চাই, যেটা দলের জন্য আমি সবচেয়ে ভালো পারি। আমার কিন্তু দলের প্রয়োজনে বোলিংও করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সেটা চাইলেই তো হবে না। আমার মনে হয়, কিপিং এবং ব্যাটিং; এই দুইটা জায়গায়ই আমি ভালো কিছু করতে পারি এবং উপভোগও করি।’

মুশফিক আরো বলেন, ‘আসলে আমি কী করবো, সেটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন কোচ বা টিম ম্যানেজমেন্ট। আপনাদের হয়তো মনে আছে, গত বছরের এশিয়া কাপে কিন্তু আমি শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলেছি। কিপিং করিনি। সেটা ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত ছিলো। ব্যক্তিগতভাবে ব্যাটিং ও কিপিং; দুটিই আমি নিয়মিত করতে চাই।’

মুশফিক করতে চান, ঠিক আছে। কিন্তু কিপিংয়ে যে দৃষ্টিকটু ভুলগুলো হচ্ছে, তার জন্য তো দলকে দিতে হচ্ছে বড় ধরনের মাশুল। যেমন হায়দরাবাদ টেস্টেই ঋদ্ধিমান সাহার সহজ স্ট্যাম্পিং মিস করেছেন তিনি। মুশফিকের মিস থেকে পাওয়া ‘জীবন’ কাজে লাগিয়ে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেছেন সাহা।

মুশফিক মনে করেন, কিপারদের এ ধরনের ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে এমন কোনো কিপার নেই যার ভুল হয় না। আমার মতে সাহাই (ঋদ্ধিমান) এখন বিশ্বের এক নম্বর কিপার। সেও কিন্তু হায়দরাবাদ টেস্টে রিয়াদ ভাইয়ের ক্যাচ ছেড়েছে। রিয়াদ ভাই যদি টেস্টটা ড্র করে আসতে পারতেন, তাহলে কিন্তু ওইটা নিয়ে কথা হতো। যেমন আমাদের এখানে হয়।’

ভুল হলেও চেষ্টার যে কমতি থাকে না, সেটাও জানিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকের সব সময় চেষ্টা থাকে নিজেদের উজার করে দেয়ার। কারণ ক্রিকেট আমাদের রুটিরুজির জায়গা। এখনে বেঈমানি করার সুযোগ নেই।’

শ্রীলঙ্কায়ও যে উইকেটের পিছনে মুশফিককেই দেখা যাবে, এটা প্রায় নিশ্চিত। মুশফিককে দেখা যেতে পারে ব্যাটিং লাইনের আরো একটু উপরের দিকেও। নিউজিল্যান্ড ও ভারত; দুই দেশের বিপক্ষে তিন টেস্টের প্রায় সবগুলোতেই খুব ভঙ্গুর দেখা গেছে বাংলাদেশের টপ অর্ডার। আজকের সংবাদ সম্মেলনে তাই মুশফিকের কাছে প্রশ্ন গেলো তার আরো উপরে ব্যাটিং করা না করা নিয়ে।

উত্তরে মুশফিক বলেন, ‘গত কয়েকটি ম্যাচে আমাদের টপঅর্ডার ভালো করতে পারেনি। তবে এবার পারবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর আমি উপরে ব্যাটিং করবো কিনা, সেটা নির্ভর করে দলীয় কম্বিনেশনের উপর। যদি সে রকম কোনো পরিস্থিতি দাঁড়ায় ও দলের প্রয়োজন পড়ে, তাহলে হয়তো আমি উপরে ব্যাটিং করতে পারি।’

সব মিলিয়ে শুধু ব্যাটিং বা শুধু কিপিং; মুশফিক এভাবে নিজেকে বন্দি করে রাখতে চান না। বরং যতোদিন উপভোগ করবেন এবং মনে করবেন যে, তাকে দিয়ে দলে প্রয়োজন মিটছে, ততোদিন দুটি ভূমিকাতেই থাকতে চান মুশফিক। কিপিংয়ের ভুলগুলো যদি কমে আসে, মুশফিকের এই চাওয়া নিয়ে নিশ্চয় আপত্তি থাকবে না কারো!