ডলার সংকটে এনপিএর ৩২৫ মিলিয়ন ডলারের কর্মসূচি বাতিলের শঙ্কা

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের (এনপিএ) ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রস্তাবিত ৩২৫ মিলিয়ন ডলারের কর্মসূচি বাতিল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশের চলমান ডলার সংকটের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকার পরিবর্তনের কারণে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণের আলোচনা স্থগিত হয়েছে।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের লোগো

গত ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

এনপিএর সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেছেন, ‘এডিবির সাথে ঋণ আলোচনা পুনরায় শুরু করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নতুন নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।’

তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্থানীয় উৎস থেকে এই কর্মসূচিতে ৭৫ মিলিয়ন ডলার প্রদানের একটি শর্তের কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীতিনির্ধারকরা এই কর্মসূচির প্রতি উদাসীনতা দেখিয়েছেন।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করে অপ্রয়োজনীয় ও রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্প বাদ দেওয়ার  নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি চলমান ডলার সংকটের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ঋণ পরিশোধের কারণে অলাভজনক প্রকল্পের জন্য বিদেশি ঋণ নেওয়া বন্ধেরও নির্দেশ দিয়েছেন।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যেখানে ২০২১ সালের আগস্টে ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। ইআরডি (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ) ২০২৪ অর্থবছরে ৩৭,৭৭৫ কোটি টাকার বিপরীতে ২০২৫ অর্থবছরে মোট ঋণ পরিশোধ ৫৭,৮০০ কোটি টাকা হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। এর জন্য শেখহাসিনা সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবণতাকে দায়ী করা হয়েছে, যার ফলে ২০০৯-১০ সালে ২১.৪৪ বিলিয়ন ডলার থেকে মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত সরকারের মোট বৈদেশিক ঋণ প্রায় চারগুণ বেড়ে ৭৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

গোলাম মোস্তফা বলেছেন, ‘সাড়ে তিন বছরের এই কর্মসূচির জন্য এডিবি ঋণের প্রাপ্যতার অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও এনপিএর চলমান অন্যান্য কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’

জাতীয় বাজেটে পেনশন বরাদ্দের ক্রমবর্ধমান চাপ কমাতে শেখ হাসিনা সরকার নন-কন্ট্রিবিউটরি পেনশন নীতি থেকে কন্ট্রিবিউটরিপেনশন নীতির দিকে অগ্রসর হয়েছে। মাত্র ১১ বছরের ব্যবধানে, জাতীয় বাজেটে পেনশন ও গ্র্যাচুইটি সুবিধার জন্য বরাদ্দ তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে - ২০২৫ অর্থবছরে ৩৯,৪১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে যা ২০১৪ অর্থবছরে ছিল ১১,৯১৩ কোটি টাকা - যা অর্থ বিভাগের আর্থিক ব্যবস্থাপনার ওপর চাপ বাড়িয়েছে।

কন্ট্রিবিউটরি পেনশন উদ্যোগের অংশ হিসেবে, সরকার ২০২৩ সালের আগস্টে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী নাগরিকদের জন্য চারটি পেনশন প্রকল্প চালু করেছে - প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা এবং সমতা। এই উদ্যোগের অধীনে, প্রকল্প গ্রাহকরা তাদের মাসিক অবদানের ভিত্তিতে ৬০ বছর বয়স থেকে বিভিন্ন হারে মাসিক পেনশন সুবিধা পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে, নতুন পেনশন কর্মসূচিটি অর্থনীতিবিদদের সমালোচনার মুখে পড়েছে, যারা বলেছেন যে এই কর্মসূচিতে লাভজনক উদ্যোগে অর্থ বিনিয়োগের জন্য বিস্তৃত পরিকল্পনা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতিবাদের কারণে, গত মাসে এনপিএ নতুন করে ডিজাইন করা পেনশন প্রকল্প ‘প্রত্যয়’-এ ৪০৩টি সরকারি স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত এবং সংবিধিবদ্ধ সংস্থাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে।

এনপিএ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মে মাসে ৩.৫ লাখ টাকা থেকে জুলাইয়ের শেষে প্রত্যয়-এর গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩.৭ লাখে পৌঁছেছে।

নিউএজ অবলম্বনে