এমএসএফ: ৫ আগস্টের পর ২৬৮ মামলায় আসামি ১.৯৪ লাখ!

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন পর্যন্ত অন্তত ২৬৮টি মামলায় ১ লাখ ৯৪ হাজার মানুষের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, যার মধ্যে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনাও রয়েছেন।

সালমান এফ রহমানকে আদালতে হাজির করার সময়...

আজ মানবধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই মামলাগুলোতে ২৬,২৬৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং প্রায় ১ লাখ ৬৮ হজার অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

আইনজীবী সুলতানা কামালের নেতৃত্বাধীন এমএসএফ জানিয়েছে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রায় ১০০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার বেশিরভাগই বিক্ষোভকারীদের হত্যার ঘটনায়।

এই প্রতিবেদন তৈরির জন্য সংগঠনটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ এবং স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে।

এমএসএফ জানিয়েছে, জুলাই থেকে আগস্টের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিচার গুলিতে কমপক্ষে ৮০৯ জন নিহত এবং ৩৩,০00 জনেরও বেশি আহত হয়েছে।

ছাত্র বিক্ষোভে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ এবং তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায়, আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অভূতপূর্ব আগ্রাসন এবং অকল্পনীয় বলপ্রয়োগ করা হয়েছে। এর ফলে দেশব্যাপী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

অবশেষে বিক্ষোভ এক দফা দাবিতে পরিণত হয়, যা শেখ হাসিনার পদত্যাগে বাধ্য করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনসমূহের নেতা-কর্মীরা আন্দোলন দমনের জন্য ছাত্রদের ওপর বর্বর হামলা চালিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, হতাহতের ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায়, মনোযোগ অন্যদিকে সরাতে সরকারি যানবাহন ও সম্পত্তি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীদের ওপর এসব অগ্নিসংযোগ ও হামলার দায় চাপানো হয়।

এমএসএফ বলছে, কোনো আসামিকে গ্রেপ্তারের পর তাকে সুরক্ষা দেওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব, কিন্তু তারা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে।

বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, প্রাক্তন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং আদালতে অভিযুক্ত অন্যান্য ব্যক্তিদের ওপর হামলার কথা উল্লেখ করে এমএসএফ বলেছে, বিশেষ করে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রীয় সংস্কারের কাজ চলার সময় এ ধরনের আচরণ আদালত কক্ষে কাম্য নয়।

আগস্ট মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ২৩টি ঘটনায় অন্তত ২০৪ জন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৯ জন নিহত এবং ১৯৫ জন আহত হন। সহিংসতার ২৩টি ঘটনার মধ্যে ১২টি বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে, ৯টি বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষের জের ধরে, ১টি আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে এবং ১টি জামায়াত-বিএনপির সংঘর্ষের জের ধরে ঘটে। নিহতদের মধ্যে পাঁচজন বিএনপি এবং তিনজন আওয়ামী লীগের কর্মী।

মানবাধিকার সংগঠনটি জানিয়েছে, ৫ আগস্টের পর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ কমপক্ষে আটটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অভিযুক্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক সংবাদকর্মী শাকিল আহমেদ এবং ফারজানা রূপাকে।

অন্যান্য অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল হক বাবু, প্রাক্তন প্রধান সংবাদ সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, সময় টেলিভিশনের পরিচালক আহমেদ জোবায়ের, এটিএন নিউজের প্রাক্তন প্রধান সংবাদ সম্পাদক মুন্নী সাহা এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাইমুল ইসলাম খান।

এমএসএফ বলেছে, যেভাবে সাংবাদিকদের তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া হচ্ছে তা কেবল অনাকাঙ্ক্ষিত নয়, বরং স্বচ্ছতা, গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হামলা, সেইসঙ্গে নিরপেক্ষ এবং সৎ সাংবাদিকতার কণ্ঠ রোধ করা।

সংগঠনটি আরও বলছে, সাংবাদিকতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা এবং নিশ্চিত করার জন্য সাংবাদিকদের উপযুক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব এবং কর্তব্য।