ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ভেঙে সংবিধান পুনর্লিখন চান ড. আলী রিয়াজ

ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ এবং তার অপব্যবহারের চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে বাংলাদেশের সংবিধান পুনর্লিখন অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির বিশিষ্ট অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ।

ড. আলী রিয়াজ

বৃহস্পতিবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘সংবিধান পুনর্লিখন ছাড়া এই রাজনীতিকরণের জাল থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়।’ তিনি আরও যোগ করেন যে, তাড়াহুড়ো করে নির্বাচন জনগণের প্রয়োজনের প্রতিফলন ঘটাবে না এবং তা জাতীয় পুনর্গঠনের সঠিক পথও হবে না।

‘সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ’ (সিজিএস) আয়োজিত এই আলোচনা সভায় ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কারের ক্ষেত্র’ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

অধ্যাপক রিয়াজ বলেন, সকল স্তরের জনগণের কণ্ঠকে আরও জোরালো করার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি সত্য ঘটনা প্রকাশে জোর দিয়ে বলেন,‘"ভারতীয় গণমাধ্যমের বিভ্রান্তিকর ও ভুয়া তথ্য প্রচারণার জবাবে সঠিক তথ্য তুলে ধরা সবচেয়ে কার্যকর পন্থা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সকলেরই ভূমিকা রয়েছে। আসুন, সেই ভূমিকা পালন করি।’

অধ্যাপক রিয়াজের মতে, গণতন্ত্র এবং জনগণের ইচ্ছা প্রতিষ্ঠার জন্য ভয়ের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা অপরিহার্য। এই সময়ে গণমাধ্যম সহ সকলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের জনগণ অনেক অর্জন করেছে কিন্তু সেই অর্জনগুলো টেকসই হয়নি।

তিনি সতর্কতার সঙ্গে আশাবাদী এবং সাম্প্রতিক ঘটনাবলিকে গণজাগরণ হিসেবে অভিহিত করেন।

তিনি বলেন, ‘মুক্তি’ এবং ‘বিপ্লব’ এর মতো শব্দ ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

জিল্লুর রহমানের মতে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। গত শাসনব্যবস্থা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, চরমভাবে রাজনীতিকরণ করেছে।

অধ্যাপক রিয়াজ বলেন, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ অপরিহার্য।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, যদি এই পরিবর্তনগুলি না করা হয় তবে আরও একটি স্বৈরাচারী শাসনের উত্থানের আশঙ্কা থেকে যাবে।

অধ্যাপক রিয়াজ প্রধান উপদেষ্টার বরাত দিয়ে বলেন, সিজিএস আয়োজিত সংলাপে প্রধান বিষয়গুলো হল - সংবিধান; মানবাধিকার; বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহার, প্রশাসন, সাংবিধানিক সংস্থা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং গোয়েন্দা সংস্থা; আর্থিক নীতি, ব্যাংক ঋণ এবং বিদেশি ঋণ; এবং গণমাধ্যম।

এই সংলাপগুলো চারটি বিভাগীয় শহরে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হবে।

সিজিএস এই সংলাপগুলো থেকে প্রতিবেদন তৈরি করবে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে উপস্থাপন করবে।

সিজিএসের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক রিয়াজ জোর দিয়ে বলেন, পরিবর্তনের জন্য শুধুমাত্র সুশীল সমাজ যথেষ্ট নয়; সকল নাগরিককে একত্রিত হতে হবে।