আ. লীগকে নিষিদ্ধ চেয়ে রিট: খারিজ চাইলেন অ্যাটর্নি জেনারেল

আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং নিবন্ধন বাতিলের জন্য আদালতের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদন খারিজ করার আহ্বান জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

আওয়ামী লীগের দলীয় পতাকা

রিট আবেদনের শুনানিতে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বর্তমান সরকারের কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নিষিদ্ধ করার কোনো ইচ্ছা নেই। তিনি আরও বলেন, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংবিধানে নিশ্চিতভাবে প্রদত্ত সংগঠন ও রাজনৈতিক দল গঠনের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, যারা পূর্ববর্তী স্বৈরাচারী সরকারের সঙ্গে জড়িত থেকে অন্যায়-অনাচারে লিপ্ত ছিলেন, তাদের আইনের আদালতে বিচার করা যেতে পারে। কিন্তু কোনো ব্যক্তির কার্যকলাপের জন্য কোন রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা যুক্তিসঙ্গত নয়।

শুনানি শেষে আদালত এ বিষয়ে আগামী ১ সেপ্টেম্বর আদেশের জন্য দিন নির্ধারণ করেন।

গত ১৯ আগস্ট মানবাধিকার সংগঠন 'সারদা সোসাইটি'র নির্বাহী পরিচালক আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া জনস্বার্থে এ রিট আবেদন দায়ের করেন। রিটে জুলাই ও আগস্টের গোড়ার দিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় ছাত্র ও জনগণকে ‘ব্যাপক হারে হত্যার’ অভিযোগে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং নিবন্ধন বাতিলের জন্য আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

রিট আবেদনে আরও চাওয়া হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ তিন বছর করা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নামে যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোর নাম পরিবর্তন করা হোক।

এছাড়াও, বিদেশে পাচার হওয়া এগারো লক্ষ কোটি টাকা ফেরত আনা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের স্থানান্তরেরও দাবি জানানো হয়।

শুনানিকালে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, যিনি রিট আবেদনটি করেছেন তার এ ধরনের মামলা করার কোনো অধিকার নেই, কারণ তার সংগঠনের সংবিধান তাকে এ ক্ষমতা প্রদান করে না।

অ্যাটর্নি জেনারেল অর্থহীন মামলা দায়ের করে ও পরিচালনা করে আদালতের মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য রিট আবেদনকারীর বিরুদ্ধে খরচ আদায়েরও আহ্বান জানান।

তিনি আদালতে বলেন, আওয়ামী লীগে অনেক ভালো নেতা-কর্মী রয়েছেন যারা তাদের আদর্শে বিশ্বাসী। আমরা দেখেছি, অতীতে অনেক রাজনৈতিক বিষয় আদালতে আনা হয়েছে এবং তার মূল্য আমাদের চোকাতে হয়েছে। সম্প্রতি যে গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছে, তার প্রভাব বিচার বিভাগ পর্যন্ত পৌঁছেছে। বিচার বিভাগের কোনো ক্ষতি হলে আমার একজন আইনজীবী হিসেবে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। রাজনীতি রাজনীতির ক্ষেত্রেই থাকা উচিত।’

অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘আমরা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনাও দেখেছি, যা আমাদের কেউই চাইনি। অতীতের স্বৈরাচারী শাসনামলে বিচার বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতা ও অবিচারের প্রেক্ষাপটেই এ ধরনের ক্রোধ বলবৎ হয়েছে।’

তিনি বলেন, রিটকারী মামলায় আওয়ামী লীগকে কোন পক্ষ করেননি এবং মামলা দায়েরের আগে এই রাজনৈতিক দলকে কোনো নোটিশও দেননি।

তাই এ রিট আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় বলে তিনি দাবি জানান।

উল্লেখ্য, রিট আবেদনকারী আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া স্বয়ং এ মামলায় শুনানি করেন।