শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও ৫ মামলা, সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭০

সদ্য পদত্যাগে বাধ্য হয়ে দেশত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সোমবার ঢাকার বিভিন্ন আদালতে হত্যার অভিযোগে আরও চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া রাজশাহী জেলায় তার বিরুদ্ধে ছাত্রদল কর্মী অপহরণের অভিযোগে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ফলে মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার সংখ্যা ৭০ ছাড়িয়ে গেছে।

শেখ হাসিনা

রাজধানীতে দায়েরকৃত নতুন চারটি মামলার মধ্যে মোহাম্মদপুর, মিরপুর, ডেমরা এবং যাত্রাবাড়ী এলাকায় সংঘটিত চারটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলাগুলো দায়ের করা হয়। অন্যদিকে, অপহরণ মামলাটি দায়ের করা হয়েছে রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলা থানায়।

মোহাম্মদপুরে মনসুর হত্যা মামলা: এজহারে বলা হয়েছে গত ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুরের বসিলার বুড়িগঙ্গা ফিলিং স্টেশনের মেশিন অপারেটর মনসুর মিয়াকে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ২১ জন জড়িত ছিলেন।

মনসুরের ভাই আইনাল হক জানান, স্থানীয় মাদ্রাসা থেকে ছেলেকে আনতে যাওয়ার পথে হঠাৎ গুলিবর্ষণের শিকার হন মনসুর। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী আইনালের জবানবন্দি গ্রহণ করেন এবং মোহাম্মদপুর থানাকে এজাহার হিসেবে মামলাটি রেকর্ড করার নির্দেশ দেন।

এই মামলায় আসামি হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, মোহাম্মাদ আলী আরাফাত ও জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ এবং সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

ডেমরার মিরাজ হত্যা মামলা: গত ৫ আগস্ট রাজধানীর ডেমরা এলাকায় মিরাজ হোসেনকে হত্যার অভিযোগে হাসিনা ও আরও ৯১ জনকে আসামি করা হয়েছে। ওইদিন ছাত্রদের নেতৃত্বে বিক্ষোভে যোগ দেন মিরাজ। অভিযোগ, পুলিশ, র‌্যাব এবং আওয়ামী লীগ কর্মীরা স্থানীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়।

এসময় মিরাজসহ আরও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন এবং পরে মিরাজের মৃত্যু হয়।

ভুক্তভোগীর ভাই খোরশেদ আলম ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেলাল হোসেনের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।

ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, হারুন অর রশীদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং সাবেক ডিএমপি যুগ্ম-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারসহ আরও অনেকে এই মামলার আসামি।

মিরপুরের নাহিদুল হত্যা মামলা: অভিযোগ অনুযায়ী, ১৯ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় মিরপুর-১০ এ নাহিদুল ইসলামকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় হাসিনা ও আরও ৪০ জন জড়িত ছিলেন।

ভুক্তভোগীর ভাই মো. সাবুজ ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। আদালত মিরপুর মডেল থানাকে এজাহার হিসেবে মামলাটি রেকর্ড করার নির্দেশ দেন।

এই মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, হারুন অর রশীদ, সাবেক ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক যুবলীগ নেতা শেখ ফজলে শামস পরশ এবং সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।

যাত্রাবাড়ীর দুলাল হত্যা মামলা: ৩ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের দাবিতে বিক্ষোভ চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় দুলাল ওরফে সেলিম হত্যার ঘটনায় হাসিনা ও আরও ৪৮ জনের নামে মামলা করা হয়েছে।

এই মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান এবং রমেশ চন্দ্র।

ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাদ্দাম হোসেন যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এজাহার হিসেবে মামলাটি রেকর্ড করার নির্দেশ দিয়েছেন।

রাজশাহীতে ছাত্রদল নেতা অপহরণ মামলা: অন্যদিকে, রাজশাহীতে জেলার বাঘা উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য এস এম সালাহউদ্দিন আহম্মেদ শামীম সরকার শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ ৫২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২১ মে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবহার করে সালাহউদ্দিনকে অপহরণের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাসিনা ও অন্যান্য আসামিরা।

মামলার জবানবন্দিতে তিনি দাবি করেন, অপহরণের পর তাকে নির্যাতন করা হয় এবং পায়ে গুলি করা হয়। পরে তার নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়।