তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন

২০১১ সালে বাতিল হওয়া নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে আজ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে একটি পর্যালোচনা আবেদন দাখিল করা হয়েছে। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ নাগরিকের পক্ষে আইনজীবী শরিফ ভূঁইয়া ও ব্যারিস্টার তানিম হুসাইন শাওন এই পর্যালোচনা আবেদনটি দাখিল করেন।

হাইকোর্টের ছবি

অন্য চার নাগরিক হলেন তোফাইল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, মো জোবাইরুল হক ভূঁইয়া এবং জাহরা রহমান। আবেদনটিতে প্রায় ১৪টি যুক্তি তুলে ধরে সর্বোচ্চ আদালতের রায় পর্যালোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।

আইনজীবী শরিফ ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা আপিল বিভাগের সেই রায়ের বিরুদ্ধে পর্যালোচনা আবেদন দাখিল করেছি যা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করেছিল, যে সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছিল। আসন্ন বার্ষিক ছুটির পর পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এটি উত্থাপন করা হবে।’

সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ আগামী ৬ সেপ্টেম্বর বার্ষিক ছুটিতে যাচ্ছে এবং ২০ অক্টোবর পুনরায় খুলবে।

পর্যালোচনা আবেদনের কথা উল্লেখ করে শরিফ ভূঁইয়া বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা জনগণের রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে প্রবর্তিত হয়েছিল এবং তাই এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোতে পরিণত হয়েছে, যা বাতিল করা যাবে না।

ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলকারী আপিল বিভাগের রায়টি স্ববিরোধী কারণ আদালত তার সংক্ষিপ্ত রায়ে বলেছিল যে পরবর্তী দুটি জাতীয় নির্বাচন (১০ম ও ১১তম সংসদ নির্বাচন) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে, তবে এই নির্দেশনাটি পূর্ণাঙ্গ রায়ে উল্লেখ করা হয়নি, আইনজীবী বলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে শরিফ বলেন, আপিল বিভাগ যদি পর্যালোচনা আবেদন মঞ্জুর করে তাহলে দেশে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল হবে।

এর আগে রোববার, আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম পাঁচ নাগরিককে ২০১১ সালের রায়ের পর্যালোচনা চেয়ে আদালতে আবেদন দাখিলের অনুমতি দেন।

২০১১ সালের ১০ মে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) বেআইনি ঘোষণা করে।

১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর, ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম সেলিমুল্লাহ (বর্তমানে মৃত) ও অন্যান্যরা হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।

২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বৈধ ও সংবিধানসম্মত ঘোষণা করে।

তবে হাইকোর্ট রিটকারীদের তার রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিল বিভাগে আপিল করার অনুমতি দেয়। এরই ধারাবাহিকতায়, ২০০৫ সালে রিটকারীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করেন।

এরপর আপিল বিভাগ ২০১০ সালের ১০ মে এই আপিলের শুনানির রায় ঘোষণা করে।

রায় ঘোষণার পর ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস করা হয় যার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপসহ আরও কিছু ইস্যু আনা হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়।