তেল শোধনাগার প্রকল্প: বাতিলের খাতায় এস আলম গ্রুপ
- Details
- by ২৪ ডেস্ক
রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের কারণে সরকার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণে চাটগ্রাম ভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড
১৯৬৮ সালে চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত ইস্টার্ন রিফাইনারি দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার, যার বার্ষিক জ্বালানি তেল প্রক্রিয়াজাত করার ক্ষমতা ১৫ লক্ষ টন। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এই স্থাপনাটি পরিচালনা করে। ২০২১ সালে 'ইআরপি-২' শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, যার লক্ষ্য ছিল বার্ষিক ৩০ লক্ষ টন জ্বালানি তেল প্রক্রিয়াজাত করার ক্ষমতা সম্পন্ন দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণ করা। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে বছরে প্রায় ২৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।
প্রকল্প থেকে এস আলম গ্রুপকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে বিপিসি এবং ইস্টার্ন রিফাইনারির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনায় এস আলম গ্রুপ এই প্রকল্পে যুক্ত ছিল। শিল্পগোষ্ঠীটি বিনিয়োগের মাধ্যমে ৫১ শতাংশ শেয়ার চেয়েছিল, কিন্তু বিপিসি সরকারের জন্য ৬০ শতাংশ শেয়ারের পক্ষে মত দিয়েছিল। পরবর্তীতে, অংশীদারিত্বের বিষয়টি চূড়ান্ত না করেই একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে আইন মন্ত্রণালয়ে খসড়া সমঝোতা স্মারক যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পাঠানো হয়। সরকার পরিবর্তন না হলে চুক্তি স্বাক্ষর রোধ করা যেত না, কর্মকর্তারা এমনটাই মনে করেন।
বিদ্যুৎ বিভাগও এস আলম গ্রুপের সঙ্গে অংশীদারিত্বে তেল শোধনাগার নির্মাণে সম্মত হয়নি। বিদ্যুৎ বিভাগের দুইজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানিয়েছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চুক্তি বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নতুন পথ খুঁজে বের করা হবে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. নুরুল আলম জানিয়েছেন, নতুন তেল শোধনাগার ইউনিট নির্মাণ প্রকল্পটি নিজস্ব তহবিল দিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত হবে খোলা দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম এবং নির্বাহী পরিচালক সুব্রত কুমার ভৌমিকের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগকে পাঠানো এক চিঠিতে বিপিসি জানিয়েছিল যে, ইস্টার্ন রিফাইনারি এবং এস আলম গ্রুপের মধ্যে গণ-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে ইআরএল-২ প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের আগে বিপিসি, ইস্টার্ন রিফাইনারি এবং এস আলম গ্রুপ সবকিছু নিয়ে আলোচনা করবে। আলোচনা সম্পন্ন হলে ইস্টার্ন রিফাইনারি এবং এস আলম গ্রুপ একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে গঠিত কোম্পানি (এসপিভি) গঠন করবে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, এস আলম গ্রুপ ইস্টার্ন রিফাইনারির এলাকায় ৩০-৫০ লক্ষ টন ক্ষমতা সম্পন্ন আরও একটি তেল শোধনাগার স্থাপন করবে। এস আলম গ্রুপ প্রস্তাবিত সমঝোতা স্মারকের খসড়া যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিপিসি একটি কমিটি গঠন করে।
এর আগে, ২৯ জানুয়ারি এস আলম গ্রুপ বিদ্যুৎ বিভাগকে যৌথভাবে আরএল-২ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব পাঠায়। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয় যে বিষয়টিতে বিদ্যুৎ বিভাগ ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা পেয়েছে। চিঠির সঙ্গে একটি খসড়া সমঝোতা স্মারকও পাঠানো হয়।
ফরাসি কোম্পানি টেকনিপ ইস্টার্ন রিফাইনারির বিদ্যমান ইউনিটটি নির্মাণ করেছিল এবং সরকার নীতিগতভাবে তাদের দ্বারা নতুন ইউনিট নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছিল। ইআরএল-২ প্রকল্পের জন্য আনুমানিক ১৯ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে নতুন ইউনিট কার্যক্ষম হওয়ার ৪ বছর ৯ মাসের মধ্যে খরচ উঠে আসবে।
তবে, তহবিলের বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি। দেশীয় তেল শোধনাগারের সক্ষমতা বৃদ্ধি না পাওয়ায় অধিক পরিমাণে ডিজেল আমদানি করতে হচ্ছে এবং সরকারকে প্রতিবছর অতিরিক্ত ডলার খরচ করতে হচ্ছে।
বিপিসি দেশে বার্ষিক ৬০-৬৫ লক্ষ টন জ্বালানি তেল বিক্রি করে এবং এর মধ্যে ৪৬ লক্ষ টন ডিজেল। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালিত একমাত্র তেল শোধনাগারটি বছরে মাত্র ৬ লক্ষ টন ডিজেল সরবরাহ করে এবং বাকি অংশ আমদানি করতে হয়।
বিপিসি এবং ইস্টার্ন রিফাইনারির তথ্য অনুসারে, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা ৮০ লক্ষ টন ছাড়িয়ে যেতে পারে এবং যদি আমদানির মাধ্যমে চাহিদা মেটানো হয় তবে তা দেশের অর্থনীতিতে চাপ তৈরি করবে; বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে না এবং জ্বালানি সুরক্ষা ঝুঁকির মুখে পড়বে। স্থানীয়ভাবে তেল পরিশোধন করা গেলে ডিজেলের প্রতি লিটারে ১৫ টাকারও বেশি সাশ্রয় সম্ভব, যার কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইআরএল-২ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
বিপিসির একজন কর্মকর্তা জানান, পেট্রোলের চাহিদা স্থানীয়ভাবে মেটানো হচ্ছে; ৪০ শতাংশ অকটেন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয় এবং বাকি অংশ আমদানি করা হয়। অন্যদিকে পরিবহন খাতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত ডিজেল এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত জ্বালানি তেল বেশিরভাগই আমদানি করা হয়। ইস্টার্ন রিফাইনারির নতুন ইউনিট স্থাপিত হলে ডিজেলের চাহিদার একটা বড় অংশ স্থানীয়ভাবে পূরণ করা সম্ভব হবে এবং পেট্রোল রপ্তানির সুযোগও তুৈরি হবে।
এ বিষয়ে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানি বিষয়ক বিশেষ সহকারী এম তামিম বলেছেন, এস আলম গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করা অনুচিত ছিল এবং অন্তর্বর্তী সরকার এটি বাতিল করে ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রকল্পটি যদি স্ব-অর্থায়নে করা হয় তবে তা আরও লাভজনক হবে এবং নতুন তেল শোধনাগার ইউনিট যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্মাণ করা উচিত।
প্রথম আলো অবলম্বনে
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.