‘অত্যাবশ্যকীয় সেবা’ হচ্ছে মেট্রোরেল, ধর্মঘট করলে জেল-জরিমানা!

ঢাকা মেট্রোরেলের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে এবং এ লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই) হিসেবে ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

মেট্রোরেলের ছবি

আজ রোববার আগারগাঁও স্টেশন থেকে সচিবালয় স্টেশন পর্যন্ত মেট্রোরেলে যাত্রা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো ধরনের নাশকতা রোধ করতে এবং নিরাপত্তা জোরদার করতে আমরা মেট্রোরেলকে কেপিআই হিসেবে ঘোষণা করার কাজ করছি। পাশাপাশি, এটিকে অত্যাবশ্যকীয় সেবা হিসেবে ঘোষণা করার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে যাতে কেউ এটি ব্যাহত করতে না পারে।’

জাতীয় অর্থনীতি বা প্রতিরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো কেপিআই নিরাপত্তা সুবিধার আওতায় থাকে। তবে, মেট্রোরেলের ক্ষেত্রে কীভাবে কেপিআই ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা।

মেট্রোরেলকে ‘অত্যাবশ্যকীয় সেবা’ হিসেবে ঘোষণা করা হলে সরকার ধর্মঘট বা কর্মবিরতি নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা পাবে। ২০২৩ সালের অত্যাবশ্যকীয় সেবা আইন অনুসারে, অবৈধ ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী যেকোনো ব্যক্তির এক বছরের জেল, ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতার জের ধরে গত ১৮ জুলাই মেট্রোরেলে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরের দিন কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশনে হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে রোববার পর্যন্ত বন্ধ ছিল ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল সেবা।

মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে যারা ভাঙচুর করেছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘বিষয়টি গণআন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকায় কিছু জটিলতা রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনাটি গণআন্দোলনের অংশ হওয়ায় সকল মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে, আপনারা সকলেই জানেন যে দেশে পরিবর্তন আনার আন্দোলনে যারা জড়িত ছিলেন, তারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারেন না।’

‘এসব ঘটনা ঘটিয়েছে অপরাধীরা। আমাদের কাছে তাদের ভিডিও ফুটেজ আছে। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

সম্প্রতি সহিংসতার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন দুটি এখনও বন্ধ থাকবে। স্টেশন দুটি কবে নাগাদ চালু করা সম্ভব হবে, সে বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান উপদেষ্টা ফাওজুল।

তিনি বলেন, ‘তিন-চার দিন আগে মেট্রোরেল স্থাপনকারী জাপানি কোম্পানির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। অন্যান্য রুটে সেবা পুনরায় চালু করার জন্য আমরা কাজ করছি। আজ সন্ধ্যায় জাপানি রাষ্ট্রদূত আমার সঙ্গে দেখা করবেন।’

‘কাজীপাড়া এবং মিরপুর-১০ স্টেশন দুটি কত দ্রুত পুনরায় চালু করা যেতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা করব। স্টেশন দুটিতে ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয় করে পুনরায় চালু করার জন্য সুনির্দিষ্ট সময়সূচি প্রদানের জন্য মেট্রোরেলের এমডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে, হাসিনা সরকারের পতনের পর ‘বৈষম্যহীন’ বেতন কাঠা প্রণয়নের দাবিতে গত ৮ আগস্ট মেট্রোরেলের ১০ থেকে ২০ জন কর্মী তাদের কাজ বন্ধ রেখেছিলেন। গত মঙ্গলবার তারা কাজে ফিরেছেন।

মেট্রোরেল পরিচালনার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা গত ১১ আগস্ট জানিয়েছিলেন যে, সেবা পুনরায় চালুর আগে তা পরীক্ষা করা হবে এবং সোমবার বা মঙ্গলবার থেকে এক সপ্তাহব্যাপী পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলবে। ১৭ আগস্ট থেকে সেবা পুনরায় চালুর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

তবে, মেট্রোরেলের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ২০ আগস্ট তাদের কাজে যোগদান করায় মেট্রোরেল পুনরায় চালু করতে কার্যত আরও সময় লেগে যায়।

‘আপনারা সকলেই জানেন যে বর্তমান সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। আমি যখন শপথ গ্রহণ করি, তখন প্রধান উপদেষ্টা আমাকে বলেছিলেন যে আমার প্রথম কাজ হবে মেট্রোরেল সেবা পুনরুদ্ধার করা। আমরা তা করেছি। আমাদের পুনরায় বোর্ড গঠন করতে হয়েছে। বোর্ড কয়েকটি সভা করেছে এবং তাদের দাবি উপস্থাপন করেছে। আমরা সেগুলো খতিয়ে দেখছি,’ বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘১৭ আগস্ট মেট্রোরেল পুনরায় চালু করার কথা ছিল, কিন্তু কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কারণে তা সম্ভব হয়নি।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘কিছু লোক যখন তিন লাখ যাত্রীকে জিম্মি করে তাদের দাবি আদায়ের চেষ্টা করেন, তা কোনো ভাবেই কাম্য নয়।’

এখন বিক্ষোভ এবং দাবি আদায়ের মৌসুম চলছে মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, ‘সকলেই চান যে বৈষম্য অথবা পার্থক্য দূর হোক। ১৬ বছর ধরে এটা অত্যাচার হিসেবে চলে আসছে... আর বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে মাত্র ১৬ দিন আগে। আমাদেরকে অন্তত ১৬ মাস সময় দিন। আমরা ধীরে ধীরে সবকিছু বিবেচনা করব।’

তিনি আরও বলেন, সরকার যদি একসঙ্গে সকল দাবি পূরণের চেষ্টা করে, তাহলে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পাবে।

‘আমাদের মনে রাখতে হবে যে এই সকল দাবির সাথে অর্থের একটি যোগসূত্র রয়েছে। যখন রাজস্ব আদায় বা অন্য কোনো উৎস থেকে আয় বৃদ্ধি পায়নি, তখন সরকার কীভাবে এই সব দাবি পূরণ করবে? আমরা যদি শুধু নোট ছাপাই, তাহলে মুদ্রাস্ফীতি হবে। আর তাতে সাধারণ মানুষ কষ্ট পাবে। তাই, মেট্রোরেল কর্মীদের এই ধর্মঘট ছিল একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা এবং আমরা আশা করি ভবিষ্যতে এটি আর ঘটবে না।’