রাওয়ালপিন্ডিতে ঐতিহাসিক জয় বাংলাদেশের

ড্রয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট। কিন্তু জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। চতুর্থ দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে মিরাজের কথার বাস্তব প্রতিফলন ঘটল। পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় তুলে নিলো বাংলাদেশ। আজ রবিবার পাকবাহিনীকে ১০ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। টেস্ট ক্রিকেটে পাকিস্তানের বিপক্ষে এটাই প্রথম জয় বাংলাদেশের।

বাংলাদেশের জয়ে অলরাউন্ডিং পারফর্ম করেন মেহেদি হাসান মিরাজ (মাঝে)। ছবি: এপি

৯৪ রানের ঘাটতি নিয়ে সকালে পঞ্চম ও শেষ দিনের খেলা শুরু করে পাকিস্তান। কিন্তু বাকি নয় উইকেট নিয়ে বেশির দূর এগোতে পারেনি তারা। বাংলাদেশের স্পিন তোপে ধসে পড়ে স্বাগতিকদের দ্বিতীয় ইনিংস। প্রথম ইনিংসে প্রায় সাড়ে চার শ’ রান তোলা পাকিস্তানিরা এবার দেড় শ’ও করতে পারেনি। ১৪৬ রানে তাদের গুঁড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ।

ইতিহাস গড়তে বাংলাদেশ লক্ষ্য পায় ৩০ রানের। টাইগার দুই ওপেনার জাকির হাসান (১৫*) ও সাদমান ইসলাম (৯*) অপরাজিত থেকে দলকে সহজেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন। অনুমিতভাবেই ম্যাচ সেরা হয়েছেন মুশফিকর রহিম। দীর্ঘ ২১ বছর পর কোনো বাংলাদেশি হিসেবে পাকিস্তানের মাটিতে সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। দ্বিশতকেরও আভাস দিয়েছিলেন মুশি।

শেষ অবধি ১৯১ রানে আউট হয়ে যান ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’। বাংলাদেশ ছাড়ায় সাড়ে পাঁচ শ’র গণ্ডি। যেখানে অবদান ছিল মিরাজেরও। সপ্তম উইকেটে মুশিকে নিয়ে ১৯৬ রানের জুটি গড়েছিলেন এই অলরাউন্ডার। ৭৭ রানে আউট হন মিরাজ। আজ বল হাতেও জ্বলে উঠলেন তিনি। চার উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের মিডল অর্ডার ধসিয়ে দিয়েছেন মিরাজ।

সাম্প্রতিককালে বহুল আলোচিত সাকিব আল হাসান তিন উইকেট নিয়ে অবদান রাখেন বাংলাদেশের জয়ে। বাকি তিন উইকেট পান শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা। বাংলাদেশের বোলারদের তোপের মুখে মোহাম্মদ রিজওয়ানই যা প্রতিরোধ গড়েছিলেন। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান রিজওয়ান এবার আউট হন ৫১ রানে। এই টেস্টের আরেক সেঞ্চুরিয়ান সৌদ শাকিল তো ফিরতিবার রানই করতে পারলেন না!

পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসে দ্বিতীয় দলীয় সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেছেন ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক। এ ছাড়া অধিনায়ক শান মাসুদ ১৪ ও বাবর আজম ২২ রানে আউট হন। দলটির বাকি সাত ব্যাটার ছুঁতে পারেননি দুই অংক। তাদের সম্মিলিত রানের যোগফল ১১! শেষ ৪২ রান যোগ করতে গিয়ে পাকিস্তান ছয় উইকেট হারিয়ে অলআউট হয়ে যায়। উঁকি দেয় বাংলাদেশের জয়।

পাকিস্তানের মাটিতে কোনো সংস্করণেই জয়ের নজির ছিল না বাংলাদেশের। ২০ ম্যাচের ২০টিতেই হেরেছিল দল। অবশেষে জয়বন্ধ্যত্ব ঘুচল টাইগারদের। তাও আবার অভিজাত সংস্করণে ১০ উইকেটের জয়ে! এর আগে ১৩টি টেস্টের ১২টিতেই হেরেছিল বাংলাদেশ। অন্য ম্যাচটিতে ড্র করে টাইগাররা। এবার রাওয়ালপিন্ডিতে ড্রয়ের সম্ভাবনা জাগলেও চমক দেখাল তারা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান : ৪৪৮/৬ ডি. ও ১৪৬/১০।
বাংলাদেশ: ৫৬৫ ও ৩০/০ (লক্ষ্য: ৩০)।
ফল: বাংলাদেশ ১০ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ)।
সিরিজ: দুই ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে।