সরকারের হাতে নগদ, পর্যালোচনায় ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স

নগদকে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুল হাসিব মনসুর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘নগদ ডাক বিভাগের একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হচ্ছিল এবং ডাক বিভাগের এতে বড় অংশীদারিত্ব রয়েছে। তাই ডাক বিভাগের পক্ষে সরকার এর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।’

নগদের লোগো

তিনি আরও জানান, এই ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করা হবে। ‘যারা লাইসেন্স পেয়েছে, পর্যালোচনার পর যোগ্য বিবেচিত হলে তারা তা ধরে রাখতে পারবে,’ বলেন মনসুর।

এর আগে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম ও লেনদেনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ ব্যাংক নগদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। তার একদিন পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এসব কথা বলেন।

এদিকে, ঢাকায় নগদের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক পৃথক সংবাদ সম্মেলনে নবনিযুক্ত প্রশাসক বদিউজ্জামান দিদার বলেন, প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) পদ বিলুপ্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, নগদ কোনো এমএফএস লাইসেন্স ছাড়াই বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে ডাক বিভাগের অধীনে কাজ করে আসছিল।

‘নগদ সম্পর্কে কিছু গুজব রয়েছে, তবে এ ধরনের প্রচারণার প্রভাব এতে পড়া উচিত নয়। নগদ ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা ক্ষতির সম্মুখীন হলে আর্থিক ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে,’ বলেন তিনি।

২০১৯ সালের মার্চে ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী হিসেবে বাজারে প্রবেশ করে নগদ। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের ‘আশীর্বাদপুষ্ট’ হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে একটি অস্থায়ী লাইসেন্স নিয়ে এটি কাজ শুরু করে।

গত জুন মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সপ্তমবারের মতো এমএফএস হিসেবে কার্যক্রম চালানোর জন্য নগদের অস্থায়ী লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়ায়। আগামী বছরের জুন মাসে এই লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস নামে একটি কোম্পানির সঙ্গে রাজস্ব ভাগাভাগির একটি চুক্তি ছিল বলে তারা শুনেছেন। পরবর্তীতে ওই কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে ‘নগদ লিমিটেড’ করা হয়।

তবে মনসুর বলেন, ডাক বিভাগ কর্তৃক থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিসকে কেবল আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এনবিএফআইগুলোকে এমএফএস পরিচালনার অনুমতি দিয়ে নিয়মে পরিবর্তন আনার পর নগদ একটি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে। ‘নগদ ফাইন্যান্স’ নামে ২০২৩ সালে লাইসেন্সটি পায়।

পরে এনবিএফআই লাইসেন্সটি ফিরিয়ে দেয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক জারি করা নির্দেশিকা অনুসারে একটি ডিজিটাল ব্যাংক লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে।

এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের প্রথম ডিজিটাল ব্যাংক ‘নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’র লাইসেন্স প্রদান করে।

গতকালের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানান, তারা নগদের একটি হিসাব পরীক্ষা পরিচালনা করবে। "নগদ পুনর্গঠিত হলে এবং নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারলে, ভবিষ্যতে লাইসেন্স পেতে পারে," বলেন মনসুর।

তিনি বলেন, জনগণের আমানত রয়েছে বলে জনস্বার্থে নগদের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে।

‘নগদের মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এর পূর্ণাঙ্গ আইনি স্বীকৃতি নেই এবং একটি অস্থায়ী অনুমোদনের ভিত্তিতে এটি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে,’ বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘নগদের আমানতের চেয়েও বেশি অর্থ তৈরি করেছে। এটা হওয়ার কথা ছিল না, তবুও হয়েছে।’

মনসুর বলেন, ‘এই পদক্ষেপের তাৎক্ষণিক উদ্দেশ্য হচ্ছে গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা করা এবং দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হচ্ছে নগদকে বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করা।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই নগদ বিকাশের মতো স্বচ্ছ, নিয়মতান্ত্রিক এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হোক। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে এমএফএস খাতে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করা, তবে অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নয়।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, অতীতে নগদকে অনেক সুবিধাজনক শর্ত দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে রয়েছে সকল সরকারি লেনদেন তাদের সেবার মাধ্যমে করার বিধান।

‘এটি বাজার ভিত্তিক সিদ্ধান্ত ছিল না; এটি ছিল পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত। সকলের জন্য সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র থাকা উচিত। নগদের কার্যক্রমে তাৎক্ষণিক কোনও পরিবর্তন আসবে না।’

তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস এটিকে একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে চান।

‘ডিজিটাল লেনদেন হলো এমএফএসের মূল লক্ষ্য এবং গ্রাহকদের অর্থের ক্ষতি না করে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা হবে। নগদের বর্তমান কমিশন, ফি এবং ছাড় অপরিবর্তিত থাকবে,’ বলেন তিনি।