বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আর নেই

প্রবীণ বাম নেতা এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আর নেই। আজ সকালে দক্ষিণ কলকাতার নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। খবর এনডিটিভি।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য

গত কয়েক বছর ধরেই শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। বিশেষ করে শ্বাসকষ্টের কারণে তাকে বারবার হাসপাতালে যেতে হয়েছে। গত বছর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে লাইফ সাপোর্টেও রাখা হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে সিপিএমের এই প্রবীণ নেতা সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন।

তিনি স্ত্রী মীরা এবং পুত্র সুচেতনকে রেখে গেছেন।

সিপিএমের শীর্ষ নীতিনির্ধারণী সংস্থা পলিটব্যুরোর প্রাক্তন সদস্য, শ্রী ভট্টাচার্য ২০০০ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। জ্যোতি বসুর পর তিনি এই পদে আসীন হন। ২০১১ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে তিনি সিপিএমের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ঐ নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জীর নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস ঐতিহাসিক জয়লাভ করে এবং রাজ্যে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারের পতন ঘটে।

কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রাজনীতিতে পূর্ণ সময়ের জন্য যোগদানের আগে একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। বিধায়ক এবং রাজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর ২০০০ সালে জ্যোতি বসুর পদত্যাগের পর তিনি উপ-মুখ্যমন্ত্রী হন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি ২০০১ এবং ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমকে জয় এনে দেন।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলে, বামফ্রন্ট সরকার জ্যোতি বসুর আমলের তুলনায় ব্যবসার প্রতি তুলনামূলকভাবে উন্মুক্ত নীতি গ্রহণ করেছিল। এই নীতি এবং শিল্পায়নের জন্য জমি অধিগ্রহণের ফলেই ২০১১ সালের নির্বাচনে বামফ্রন্টের পতন ঘটে।

২০০৬ সালের নির্বাচনে মাত্র ৩০টি আসন জয়ী তৃণমূল কংগ্রেস, সিঙ্গুরে টাটা মোটরস কারখানার বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়। অবশেষে, ২০০৮ সালে, রতন টাটা প্রকল্পটি গুজরাটে স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেন এবং এর কারণ হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের কথা উল্লেখ করেন। এটি ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারের জন্য একটি বড় ধাক্কা। একইভাবে ক্ষতিকারক ছিল নন্দীগ্রামের সহিংসতা, যেখানে একটি রাসায়নিক হাব প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়।

বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে জনঅসন্তোষ এবং রাজ্য সরকারের জমি অধিগ্রহণ নীতি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার রাজনৈতিক সুবিধা পায় মমতা ব্যানার্জীর তৃণমূল কংগ্রেস এবং ২০১১ সালের নির্বাচনে ১৮৪ টি আসনে জয়লাভ করে।