মেগা নিলাম নিয়ে আইপিএল মালিকদের বৈঠকে তুমুল বিতর্ক!

আসন্ন মেগা নিলামের আগে খেলোয়াড় ধরে রাখার নীতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের সঙ্গে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছিল। তবে সেই বৈঠক মেগা নিলামের প্রাসঙ্গিকতা এবং ভবিষ্যত নিয়ে বিতর্কে রূপ নেয়।

আইপিএলের ট্রফি

ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বিসিসিআই সদর দপ্তরের চতুর্থ তলায় বৈঠক হলে কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজির মধ্যে তীব্র মতবিনিময় হয়। অবশেষে বোর্ড জানায় যে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দলগুলিকে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।

বৈঠকে বেশ কয়েকজন মেগা নিলামের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। এর মধ্যে অন্যতম ছিলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের শাহরুখ খান এবং সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের কাব্য মারান।

কাকতালীয়ভাবে, আইপিএল ২০২৪ এর ফাইনালে লড়াই হয়েছিল এই দুই দলের মধ্যেই। স্পষ্টতই তারা তাদের উচ্চমানের দল ধরে রাখতে চান। তাদের বক্তব্য, ব্র্যান্ডিং এবং ভক্তদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির জন্য দলগুলিকে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা প্রয়োজন।

বৈঠকে উপস্থিত বিসিসিআইয়ের এক শীর্ষ সূত্র জানায়, শাহরুখ খান মেগা নিলামের বিরুদ্ধে তীব্র যুক্তি উপস্থাপন করেন। এক পর্যায়ে, খেলোয়াড় ধরে রাখার সংখ্যা নিয়ে পাঞ্জাব কিংসের সহ-মালিক নেস ওয়াদিয়ার সঙ্গে কেকেআর মালিকের উত্তপ্ত বিতর্ক হয় বলেও জানা গেছে।

বৈঠকের পর ওয়াদিয়া কেকেআর মালিকের সঙ্গে কোনও বিরোধের কথা অস্বীকার করেন। পাঞ্জাব কিংসের সহ-মালিক বলেন, `আমি শাহরুখকে ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে চিনি। এখানে কোনও বিরোধ নেই।' তবে বিষয়টিতে তার দলের অবস্থান সম্পর্কে মুখ খোলেননি তিনি। ‘সবাই তাদের মতামত দিয়েছেন এবং তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। দিন শেষে, আপনাকে সকল পক্ষের কথা ভাবতে হবে এবং সকলের জন্য যা ভালো তাই করতে হবে। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ,’ তিনি বলেন।

মেগা নিলামের পরিবর্তে মিনি নিলামের পক্ষে সওয়াল করে শাহরুখ খানের সমর্থন পান এসআরএইচ মালিক কাব্য মারান। বৈঠকে কাব্য বলেন, ‘একটি দল গড়ে তুলতে অনেক সময় লাগে এবং তরুণ খেলোয়াড়দের পরিপক্ক হতেও বেশ সময় এবং বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি অভিষেক শর্মার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অভিষেকের ধারাবাহিক পারফর্ম করতে তিন বছর সময় লেগেছে। অন্যান্য দলের ক্ষেত্রেও এরকম অনেক উদাহরণ রয়েছে।’

দিল্লি ক্যাপিটালসের পার্থ জিন্দাল ছিলেন অন্যতম যিনি বেশি সংখ্যক খেলোয়াড় ধরে রাখার বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ‘মেগা নিলাম আয়োজন নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে শুনে আমি অবাক হয়েছি। কিছু লোক বলেছেন যে মেগা নিলাম একেবারেই হওয়া উচিত নয়। কেবল ছোট নিলাম হওয়া উচিত। আমি সেই মতের নই। আমার মনে হয় এটি সকলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করে এবং এটি খুবই ভালো। এটি আইপিএলকে আইপিএল বানিয়েছে। এটি প্রতিযোগিতামূলক করে তোলে। এটি সকলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করে।’

জিন্দাল বলেন, তিনি ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নিয়মের ধারাবাহিকতারও বিরোধী, যা আইপিএল কমিউনিটিকে বিভক্ত করে ফেলেছে। কিছু লোক এটি চায় কারণ এটি তরুণ খেলোয়াড়দের আইপিএলে খেলার সুযোগ দেয়। আবার কিছু লোক এটি চায় না কারণ এটি অলরাউন্ডারদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য ক্ষতিকর। তাই এটি একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া। আমি দ্বিতীয় দলের সঙ্গে। আমি এটি চাই না। আমি খেলাটিকে যেমন ছিল তেমন রাখতে চাই, এগারো বনাম এগারো। আমি মনে করি অলরাউন্ডাররা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নিয়মের কারণে আপনার এমন খেলোয়াড় থাকবে যারা আইপিএলে বোলিং করে না অথবা ব্যাটিং করে না, যা ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য ভালো না।

বৈঠকে উপস্থিত অন্যান্য মালিকদের মধ্যে ছিলেন দিল্লি ক্যাপিটালসের কিরণ কুমার গ্র্যান্ডি, লাকনাউ সুপার জায়ান্টসের সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, চেন্নাই সুপার কিংসের রূপা গুরুনাথ, রাজস্থান রয়্যালসের মনোজ বাদালে এবং রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর প্রথমেশ মিশ্র। কিছু মালিক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন, যার মধ্যে ছিলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের আম্বানিরা।

পরে বিসিসিআই এক বিবৃতিতে বলে, ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকরা খেলোয়াড় বিধি এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক দিক নিয়ে তাদের মতামত দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে সেন্ট্রাল মার্চেন্ডাইজিং, লাইসেন্সিং এবং গেমিং। আইপিএল প্লেয়ার বিধিমালা তৈরির আগে এই সুপারিশগুলি বিবেচনা এবং মূল্যায়নের জন্য আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের কাছে পাঠানো হবে।’