সেনাবাহিনীর সঙ্গে ‘শর্তসাপেক্ষ আলোচনায়’ বসতে রাজি ইমরান

কারাগারে বন্দি থাকা পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, দেশের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সঙ্গে 'শর্তসাপেক্ষ আলোচনায়' বসতে প্রস্তুত তার দল। আলোচনার জন্য তিনি একজন প্রতিনিধিও নিয়োগ করেছেন।

ইমরান খান, ফাইল ছবি

মঙ্গলবার কারাগার থেকে দেওয়া এক বার্তায় ইমরান বলেন, ‘সেনাবাহিনী যদি তাদের প্রতিনিধি নিয়োগ করে, তবে আমরা শর্তসাপেক্ষে আলোচনা করব।’ বুধবার তার এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে এই বার্তা প্রকাশ করা হয়।

আলোচনার জন্য ইমরানের একটি শর্ত হলো 'নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ' নির্বাচন অনুষ্ঠান। এছাড়াও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে আনা 'ভিত্তিহীন' মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছেন তিনি। আলোচনার জন্য তার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মিত্র মাহমুদ খান আচাকজাইকে প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ইমরান।

তবে ৭৬ বছরের ইতিহাসে প্রায় অর্ধেক সময় সরাসরি পাকিস্তান শাসন করলেও রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করে আসা সেনাবাহিনী এখনও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সরকার ইমরানকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনার জন্য ‘অনুনয়-বিনয়’ করার অভিযোগ করেছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির ওপর তার পূর্ববর্তী আক্রমণের জন্য ক্ষমা চাইতে বলেছে।

এদিকে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) দলের মরিয়ম আওরঙ্গজেব এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যিনি নিজেকে বিপ্লবী দাবি করতেন, যিনি বলতেন যে তিনি কখনও ক্ষমা চাইবেন না, তিনি আজ সশস্ত্র বাহিনীর কাছে তার সঙ্গে কথা বলার জন্য অনুনয়-বিনয় করছেন।’

ফেডারেল তথ্যমন্ত্রী আত্তাউল্লাহ তারার ইমরানের প্রস্তাবকে ‘দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করেছেন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে তার ‘নোংরা রাজনীতিতে’ টেনে আনার জন্য পিটিআই প্রধানের অপর এক প্রচেষ্টা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত আগস্ট থেকে ইমরান কারাগারে রয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে তার বিরুদ্ধে আনা কিছু দুর্নীতির মামলায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

ইমরান ও তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) বলছে, ক্ষমতায় ফিরে আসা রোধ করতেই তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ বছরের নির্বাচনে পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ফলাফল করে। সম্প্রতি একটি আদালত রায় দিয়েছে যে পিটিআই অতিরিক্ত সংরক্ষিত আসনের জন্য যোগ্য, যদিও এখনও সরাসরি সরকার গঠনের জন্য এ সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়।

গত ২২ জুলাই, রাজধানী ইসলামাবাদে পিটিআই সদর দপ্তরে পুলিশি অভিযান চালানো হয়। এর এক সপ্তাহ আগে, সেনাবাহিনীর সমর্থনে শাহবাজ শরীফের সরকার প্রধান বিরোধী দলটি নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেয়।

এ মাসের শুরুর দিকে, ইসলামাবাদের একজন বিচারক ইমরানের অবৈধ বিবাহের সাজা বাতিল করে দেন। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট পিটিআইকে আরও কিছু সংসদীয় আসন প্রদান করে, যার ফলে দলটি জাতীয় পরিষদের বৃহত্তম দলে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

এই দুটি ঘটনাই শাহবাজ শরীফের সরকারের জন্য বড় ধাক্কা বলে বিবেচিত হচ্ছে।

পিটিআই নিষিদ্ধ করার চেষ্টাকে ‘গণতান্ত্রিক রীতির ওপর একটি বিরাট আঘাত’ বলে অভিহিত করে পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশন বলেছে, এটি ‘রাজনৈতিক হতাশার’ গন্ধ বহন করছে।

এ মাসেই জাতিসংঘের একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল জানিয়েছে যে ইমরানকে আটকের পেছনে ‘কোনো আইনি ভিত্তি নেই’ এবং মনে হয় ‘রাজনৈতিক পদে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য’ করতেই এমন করা হয়েছে।