আলেক বল্ডউইনের মামলায় নাটকীয় মোড়, স্বস্তির নিঃশ্বাস অভিনেতার

প্রায় তিন বছর ধরে চলা আলেক বল্ডউইনের বিরুদ্ধে মামলা শেষ হলো শুক্রবার। সিনেমাটোগ্রাফার হ্যালিনা হাচিন্সের মৃত্যুতে অভিযুক্ত অভিনেতার বিরুদ্ধে মামলায় চূড়ান্ত রায় না হলেও স্বস্তির হাসি ফুটেছে তার পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের মুখে। নিউ মেক্সিকো আদালতের জানালাবিহীন কক্ষে কাঠের বেঞ্চিতে বসে দীর্ঘদিন ধরে যারা বিচার প্রক্রিয়ার সাক্ষী ছিলেন, তাদের অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

আলেক বেল্ডউইন

সকালে, ১৬ জুরি তৃতীয় দিনের জন্য আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন। হাতে খাতা-কলম, মনোযোগ সহকারে তারা ২০২১ সালে ‘রাস্ট’ সিনেমার সেটে হাচিন্সের মৃত্যুর মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়ার অংশ হতে প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে বিচার কার্য স্থগিত হওয়ায় জুরিদের তাদের স্থান ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।

‘সকলের একটি সুন্দর সপ্তাহান্ত কাটুক,’ বিচারক মেরি মারলো সোমার বলেন।

বল্ডউইনের আইনজীবীরা স্থানীয় তদন্তকারী এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে, তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করেছেন। ‘রাস্ট’ সিনেমার সেটে বাস্তব গুলি কিভাবে এসেছিল তার রহস্য উন্মোচন করতে পারে এমন তথ্যও তারা গোপন করেছিলেন বলে দাবি করেন বল্ডউইনের আইনজীবীরা।

বল্ডউইনের এটি ছিল আদালতে পঞ্চম দিন। প্রতিদিন সকালে তিনি তার স্ত্রী হিলারিয়া বল্ডউইনের সঙ্গে একটি কালো গাড়িতে আদালতে আসতেন, সাংবাদিকদের ক্যামেরার ঝলকানিকে পেছনে ফেলে। সোমবার সকালে আদালত কক্ষে প্রবেশ করে উৎসাহী বল্ডউইনকে তার আইনজীবীর সঙ্গে ফিসফিস করে কথা বলতে, লিখতে এবং ছোট ছোট কাগজ পাঠাতে দেখা যায়।

মামলার শুরুতে বল্ডউইন একটি বড় জয় লাভ করেন। বিচারক রায় দেন যে, ‘রাস্ট’ সিনেমার সহ-প্রযোজক হিসেবে বল্ডউইনের বিরুদ্ধে কোন ফৌজদারি অভিযোগ আনা যাবে না। মামলাটি শুধুমাত্র মুখ্য অভিনেতা হিসেবে বল্ডউইনের বন্দুক ব্যবহারের ওপর কেন্দ্রীভূত থাকবে।

মঙ্গলবার, বল্ডউইনের ছোট ভাই স্টিফেন বল্ডউইন আদালত কক্ষে জুরি নির্বাচনের জন্য উপস্থিত হন। তিনি প্রতিদিন আদালতে আসতেন। ৭০ জন সম্ভাব্য জুরির মধ্যে মাত্র ৩ জন ছাড়া বাকিরা সকলেই ‘রাস্ট’ সিনেমার শুটিং ঘটনা সম্পর্কে অবগত ছিলেন। দিন শেষে, ৫ জন পুরুষ এবং ১১ জন মহিলা জুরি হিসেবে নির্বাচিত হন।

বুধবার মামলার শুরুতে আদালত কক্ষ ভর্তি ছিল স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মাধ্যমকর্মী, বল্ডউইনের বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন এবং কৌতূহলী মানুষের ভিড়ে।

বল্ডউইন মনোযোগ সহকারে মামলার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষ যখন ঘটনার বিবরণ দিচ্ছিলেন তখন তিনি একটি ছোট খাতায় কিছু লিখছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষ তাদের বক্তব্যে বলেন, বল্ডউইন বন্দুক নিরাপত্তার মৌলিক নিয়ম লঙ্ঘন করে হাচিন্সের দিকে বন্দুক তাক করেছিলেন। অন্যদিকে, বল্ডউইনের আইনজীবীরা বলেন, তিনি শুধুমাত্র একজন অভিনেতা হিসেবে তার কাজ করেছিলেন এবং বন্দুকের নিরাপত্তা নিয়ে অন্য পেশাদারদের ওপর নির্ভর করেছিলেন।

বল্ডউইনের বড় বোন এলিজাবেথ কেচলার আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি আদালত কক্ষের রেলিং ধরে তার ভাইকে জড়িয়ে ধরেন।

বল্ডউইনের একজন প্রখ্যাত সমালোচক, ভুক্তভোগীদের অধিকার আইনজীবী গ্লোরিয়া অ্যালরেডও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি এই মামলায় হাচিন্সের বোন এবং বাবা-মায়ের পক্ষে লড়ছেন।

বল্ডউইনের প্রতিটি ভাব-ভঙ্গি ক্যামেরাবন্দি হচ্ছিল। তিনি অনেকটা সংযত ও মনোযোগী ছিলেন।

শুক্রবার বিকেলে, বল্ডউইনের মুখে কোনো ভাবান্তর না থাকলেও আদালত কক্ষে উত্তেজনা বাড়ছিল। বিচারক মারলো সোমার মামলা খারিজের জন্য আবেদন মূল্যায়ন করছিলেন।

অভিযোগ উঠে যে, তদন্তকারীরা একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করেছেন। ‘রাস্ট’ সিনেমার সেটে যে গুলি ব্যবহার করা হয়েছিল তা হয়ত একজন ব্যক্তি সরবরাহ করেছিলেন। গত মার্চ মাসে সেই ব্যক্তি নিজেই এই তথ্য তদন্তকারীদের জানিয়েছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষ বলেন যে এই তথ্য তাদের কাছে গুরুত্বহীন বলে মনে হয়েছিল। অন্যদিকে, বল্ডউইনের আইনজীবীরা অভিযোগ করেন যে রাষ্ট্রপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করেছে।

বিকেলের বিরতিতে, বল্ডউইন আদালত কক্ষ থেকে বের হয়ে যান। তার চোখে পানি। হিলারিয়া বল্ডউইন তার হাত ধরে তাকে সান্ত্বনা দেন।

পুনরায় আদালত কক্ষে ফিরে এসে বল্ডউইনের আইনজীবী "রাষ্ট" সিনেমার গুলি সরবরাহকারী সেথ কেনির সঙ্গে বাদানুবাদে লিপ্ত হন।

কিন্তু হঠাৎ আদালত কক্ষ নীরব হয়ে যায় যখন বিচারক একজন পুলিশ তদন্তকারীকে প্রশ্ন করেন যে, ‘রাস্ট’ সিনেমার মামলা থেকে আলাদা করে কেন একটি গোপন ফাইলে সেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রাখা হয়েছিল এবং মামলার মুখ্য রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কারি মরিসে কি এই বিষয়ে অবগত ছিলেন?"

‘হ্যাঁ, তিনি জানতেন,’ তদন্তকারী জবাব দেন।

আদালত কক্ষ থেকে হ্যাঁ করা শব্দ বেরিয়ে আসে যখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী স্বীকার করেন যে তার সহকর্মী আইনজীবী পদত্যাগ করেছেন। এরপরই বিচারক ঘোষণা করেন যে, ‘এই মামলা খারিজের জন্য যথেষ্ট কারণ রয়েছে।’

বিচারকের রায় শুনে বল্ডউইন আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। আদালত কক্ষ ত্যাগের সময় তার চোখে ছিল জল।