তুরস্ক: ন্যাটোতে ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতা ‘গ্রহণযোগ্য নয়’

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বৃহস্পতিবার বলেছেন, ন্যাটোর মধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতার যেকোনো প্রচেষ্টা ‘গ্রহণযোগ্য নয়’। ন্যাটো নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের পর ওয়াশিংটন ডিসিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এরদোয়ান বলেন, ‘আমাদের জোটের মৌলিক মূল্যবোধকে যারা পদদলিত করেছে, সেই ইসরায়েলি প্রশাসনের পক্ষে ন্যাটোর সঙ্গে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়।’

রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান

৩২ সদস্যের এই প্রতিরক্ষা জোটের সঙ্গে ন্যাটোর অংশীদার নামে পরিচিত অনেক দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থারও সম্পর্ক রয়েছে। উল্লেখ্য, সামরিক জোটের ৭৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে তিন দিনের শীর্ষ সম্মেলনে ন্যাটো নেতারা একত্রিত হয়েছিলেন।

এরদোয়ান বলেন, শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে আলোচনার সময় তিনি ফিলিস্তিনের অধিকৃত অঞ্চল, বিশেষ করে গাজায় ইসরায়েলের চলমান ‘নৃশংসতা’র বিষয়টির দিকে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

তিনি বলেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রশাসন ‘তাদের সম্প্রসারণবাদী এবং বেপরোয়া নীতির মাধ্যমে’ কেবল তাদের নিজস্ব নাগরিকদেরই নয়, বরং পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তাকেই ঝুঁকির মুখে ফেলছে।

‘যতক্ষণ না ফিলিস্তিনে একটি ব্যাপক, টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠিত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ন্যাটোর মধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতার যেকোনো প্রচেষ্টাকে তুরস্ক অনুমোদন করবে না,’ এরদোয়ান জোর দিয়ে বলেন।

‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বশীল সদস্যদের ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুযায়ী ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ,’ তিনি বলেন।

‘তেমনিভাবে, সমস্ত চাপ এবং ভয় দেখানোর চেষ্টা সত্ত্বেও, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে,’ এরদোয়ান বলেন। একই সঙ্গে তিনি অন্যান্য দেশগুলোর কাছে আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের দাবি জানান।

তিনি বলেন, তুরস্ক যেকোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত, যার মধ্যে রয়েছে প্রথমে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা এবং তারপর গাজায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জামিনদারের ভূমিকা পালন।

এরদোয়ান আরও বলেন, ‘আমি এখানে আমাদের সমস্ত মিত্রদের কাছে নেতানিয়াহু প্রশাসনের ওপর চাপ বৃদ্ধির আহ্বান জানাচ্ছি যাতে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা যায় এবং নয় মাস ধরে ক্ষুধার্ত গাজার জনগণের কাছে নিরবচ্ছিন্নভাবে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া যায়।’

২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের সীমান্ত-পার হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত ৩৮,০০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক অভিযান ২.৩ মিলিয়ন মানুষের এই ছোট্ট এলাকাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে, যার ফলে বেশিরভাগ বেসামরিক নাগরিক গৃহহীন এবং দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।

অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি এলাকায় গণহত্যার অভিযোগেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) একটি মামলা চলমান রয়েছে।

অন্যদিকে, ন্যাটোর কিছু সদস্য দেশের সাথে পিকেকে ও তার শাখা সংগঠনের সম্পর্কের তীব্র সমালোচনা করে এরদোয়ান বলেন, এই ‘বিকৃত সম্পর্ক’ ন্যাটোর ঐক্য ও অখণ্ডতার জন্য ক্ষতিকর। তিনি মিত্রদের এই ভুল নীতি পরিহার করার আহ্বান জানান।

এছাড়াও, এরদোয়ান সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সাথে সাক্ষাতের জন্য তার প্রচেষ্টার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং জানান, তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার জন্য প্রথম দিন থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন।

শীর্ষ সম্মেলনের ছোটো একটি বিবরণীতে এরদোয়ান জানান যে তিনি সুইডেন, ফিনল্যান্ড, স্লোভেনিয়া, স্লোভাকিয়া, স্পেন, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, এস্তোনিয়া, আইসল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডসের নেতাদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছেন। তিনি আরও জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের সঙ্গে তার সাক্ষাতে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সংগ্রহের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও, তিনি সাংহাই সহযোগিতা সংস্থায় (এসসিও) তুরস্কের স্থায়ী সদস্যপদ লাভের জন্য রাশিয়া, চীন ও কাজাখস্তানের সমর্থন চেয়েছেন।