স্রেব্রেনিৎসার ক্ষত এখনও মেটেনি: ২৯ বছরেও বিচারের দাবিতে বিশ্ব

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার স্রেব্রেনিৎসা শহরের আশেপাশের পাহাড়ে পরিকল্পিতভাবে যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের স্মৃতিকে সম্মান জানাতে হবে। ১৯৯৫ সালে সংঘটিত গণহত্যার সমস্ত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।

জোসেপ বোরেল

বোরেল, স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যার ২৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে একটি বিবৃতি জারি করেছেন। তিনি নেতাদের বিভেদমূলক বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করার এবং সত্য, ন্যায়বিচার ও সংলাপের মাধ্যমে কাজ করার আহ্বান জানান। 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অতীতের ক্ষত নিরাময়ের জন্য ঐতিহাসিক সত্যকে স্বীকার করা এবং শিক্ষা দেওয়া, নিহতদের সম্মান ও স্মরণ করা, নিখোঁজদের চিহ্নিত করা এবং সমস্ত অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা প্রয়োজন। এটি গণহত্যার দিকে পরিচালিত ঘৃণার শিকড়কে মোকাবেলা করার মূল চাবিকাঠি।'

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘যারা গণহত্যা অস্বীকার করে, ইতিহাস পুনর্লিখন করার চেষ্টা করে এবং যুদ্ধাপরাধীদের মহিমান্বিত করে তাদের জন্য কোনো স্থান নেই।' 

এদিকে বিভিন্ন দেশ থেকে শত শত মোটরসাইকেল আরোহী বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভোতে গণহত্যার শিকারদের স্মরণে স্রেব্রেনিৎসার পোটোকারি মেমোরিয়াল কবরস্থানে জড়ো হয়েছিলেন।   

স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যা স্মরণে ১০ জুলাই, বুধবার ত্রয়োদশতম ইন্টারন্যাশনাল স্রেব্রেনিৎসা মোটরসাইকেল ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়। এবারের স্লোগান ছিল, ‘ভুলে যাওয়া যাবে না, পুনরাবৃত্তি করা যাবে না।'   

মোটরসাইকেল চালকরা স্রেব্রেনিৎসার পোটোকারি মেমোরিয়াল কবরস্থানে যাওয়ার আগে নিহত শিশুদের স্মৃতিস্তম্ভের সামনে ফুল দিয়ে তাদের স্মরণ করেন। 

এর আগে ৯ জুলাই, মঙ্গলবার, ১৯৯৫ সালের গণহত্যার শিকার আরও ১৪ জনের দেহাবশেষ পোটোকারি মেমোরিয়াল কবরস্থানে সমাহিত করার জন্য পাঠিয়েছে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা কর্তৃপক্ষ।

১১ জুলাই, বৃহস্পতিবার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ তাদের জানাজা ও দাফনে অংশ নিয়েছেন। এর ফলে এই কবরস্থানের মোট কবরের সংখ্যা ৬ হাজার ৭৬৫টিতে পৌঁছেছে।     

প্রসঙ্গত, প্রতি বছর ১১ জুলাই, গণহত্যার শিকারদের শনাক্ত করার পর দেশটির পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত পোটোকারিতে একটি কবরস্থানে তাদের দেহাবশেষ সমাহিত করা হয়। 

এদিকে মে মাসের শেষের দিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১১ জুলাইকে স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যা স্মরণ দিবস হিসাবে মনোনীত করে একটি প্রস্তাব পাস করেছে। জার্মানি প্রস্তাবটি পেশ করেছিল। ৪০টির বেশি দেশ এটিতে সমর্থন দিয়েছে। 

উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালের ১১ জুলাই বসনিয়ান সার্বরা স্রেব্রেনিৎসা শহরে একটি জাতিসংঘ সুরক্ষিত নিরাপদ এলাকা দখল করে। তারা ৮ হাজার ৩০০ জনের বেশি বসনিয়ার মুসলিম পুরুষ ও বালকদের তাদের স্ত্রী, মা, বোনদের থেকে আলাদা করে এবং তাদের হত্যা করে। যারা পালানোর চেষ্টা করেছিল তাদের দুর্ভাগ্যজনক শহরের চারপাশে জঙ্গল এবং পাহাড়ের উপর দিয়ে তাড়া করা হয়েছিল। 

সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি