আপনি পড়ছেন

অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকই মনে করেন, আগামী নভেম্বরের নির্বাচনের পর যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার হোয়াইট হাউসে ফিরে আসেন, সেই আশাতেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা এবং লেবাননে সময়ক্ষেপণ করছেন। কিন্তু এবার ট্রাম্প যুদ্ধের পরিণতি প্রভাবিত করতে বা ইসরায়েলের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবেন - এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ।

benjamin netanyahu and donald trump 1বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প

মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি দুটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা পরিচালিত হয় বলে মনে হয়। একটি সমগ্র বিশ্বের জন্য এবং অন্যটি শুধুমাত্র ইসরায়েলের জন্য। প্রথমটি পরিচালিত হয় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের বিখ্যাত উক্তিকে সামনে রেখে, ‘আমেরিকার কোন স্থায়ী বন্ধু বা শত্রু নেই, আছে শুধু স্বার্থ’।

তবে ইসরায়েল এর ব্যতিক্রম। চলমান গাজা যুদ্ধ আবারও এই দাবির সত্যতা প্রমাণ করেছে।

যদিও ওয়াশিংটন ইসরায়েলের যুদ্ধের লক্ষ্যের সঙ্গে পুরোপুরি একমত, তবে নেতানিয়াহুর দীর্ঘ যুদ্ধ এবং 'সম্পূর্ণ বিজয়' ধারণার সঙ্গে তারা মৌলিকভাবে দ্বিমত পোষণ করে।

আফগানিস্তান এবং ইরাকে দীর্ঘ দুটি যুদ্ধ মার্কিনিদের শিখিয়েছে যে, যুদ্ধের স্থায়িত্ব বা অবাস্তব প্রত্যাশা কোনটিই অনিবার্য পরিণতি পরিবর্তন করতে পারে না।

প্রকৃতপক্ষে, অনেক মার্কিন কর্মকর্তা, সামরিক জেনারেল এবং বিশ্লেষক নেতানিয়াহুকে সতর্ক করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কোন লাভ হয়নি।

ইতিহাসের এই নির্দিষ্ট মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করা আমেরিকার জন্য কেবল ক্ষতিকর। কারণ ইউক্রেন গুরুতর অস্ত্র ঘাটতি এবং আঞ্চলিক ক্ষতির মুখে রয়েছে, এবং মার্কিন-ইউরোপীয় মিত্ররা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

মার্কিন-ইসরায়েলি সম্পর্ক একটি অনন্য পররাষ্ট্রনীতির আদর্শ অনুসারে পরিচালিত হয় বলে বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলকে সর্বাত্মক সহায়তা করে যাচ্ছে, যাতে তারা এই হেরে যাওয়া যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারে।

অবশ্যই, এই যুদ্ধ চলছে ১ লক্ষ ২৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনির জীবনের বিনিময়ে, যারা ইসরায়েলি হামলা, গোলাবর্ষণ এবং গণহত্যার শিকার হয়ে মারা গেছে বা আহত হয়েছে। অনাহার ও রোগে মারা যাওয়া লোকদের সংখ্যা আরও বেশি, যার হিসাব এখনও পুরোপুরি পাওয়া যায়নি।

ওয়াশিংটন গাজায় চলমান গণহত্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন পরিকল্পনার ওপর যুদ্ধের ফলাফল এবং ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন। লাল সাগরের অভূতপূর্ব অস্থিতিশীলতার কারণে তারা এই অঞ্চলে তাদের ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব নিয়েও উদ্বিগ্ন।

তবুও, জো বাইডেন ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ এবং তাদের ক্ষয়িষ্ণু অর্থনীতিতে সহায়তা করে যাচ্ছেন। ২০ এপ্রিল, মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ ইসরায়েলকে ২৬.৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রদানের জন্য একটি বিল পাশ করেছে। অধিকন্তু, ইসরায়েলে বিশাল পরিমাণে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।

এই বিস্ফোরক শুধু গাজাকে ধ্বংস করছে না, বরং মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে সামান্যতম বিশ্বাসযোগ্যতা রয়ে গেছে তাও ধ্বংস করছে। আরও খারাপ, ইসরায়েলের প্রতি আমেরিকার অন্ধ সমর্থন আন্তর্জাতিকভাবে ওয়াশিংটনের অবস্থানকেও ক্ষুন্ন করেছে।

তাহলে, ট্রাম্প এমন কী করতে পারেন যা বাইডেন করেননি?

ট্রাম্পের রাজনীতি হচ্ছে নির্লজ্জভাবে ক্ষমতাকেন্দ্রিক। ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তার শাসনামলে, তিনি ইসরায়েলের প্রতিটি ইচ্ছা পূরণ করে আমেরিকান জ্বিনের ভূমিকা পালন করেছিলেন, যদিও এই ধরনের সব দাবি ছিল আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন।

ট্রাম্পের ইসরায়েল-পন্থী নীতির মধ্যে ছিল জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া, গোলান মালভূমিকে ইসরায়েলি ভূমি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা এবং পশ্চিম তীরে সমস্ত বেআইনি ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকে স্বীকৃতি দেওয়া।

তবে নেতানিয়াহুও ক্ষমতালোভী, যা ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউস থেকে লজ্জিতভাবে বেরিয়ে যাওয়ার পর বিরক্ত করেছিল।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে অ্যাক্সিওস-এর সাংবাদিক বারাক রাভিদকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমি তার পর থেকে তার সঙ্গে কথা বলিনি।’

কিন্তু এখন, উনারা তাদের পুরনো প্রেমের সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন। বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করে নেতানিয়াহুর প্রকাশ্য বক্তব্যে রিপাবলিকান রাষ্ট্রপতি প্রার্থী অবশ্যই খুশি হবেন। বিনিময়ে, ট্রাম্প ‘কাজ শেষ’ করার জন্য প্রস্তুত, যেমনটি তিনি ২৭ জুন প্রথম রাষ্ট্রপতি বিতর্কে বলেছিলেন।

যাইহোক, ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলের দুর্ভাগ্যের হাত থেকে মুক্তি পেতে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন কিছুই করবে না, কারণ ইসরায়েলের সমস্যাগুলি ওয়াশিংটন থেকে উদ্ভূত হয়নি।

ইসরায়েলের সংকট বহুমুখী। গাজায় বিরাট ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো সত্ত্বেও তারা যুদ্ধ জিততে পারছে না। তারা লেবাননে যুদ্ধের নিয়ম পরিবর্তন করতেও ব্যর্থ হচ্ছে কারণ তাদের শত্রুরা শক্তিশালী, এবং তাদের সেনাবাহিনী একাধিক মোর্চায় যুদ্ধ করে জয়লাভ করতে অক্ষম- এমনকি একটি মোর্চাতেও।

ইসরায়েলি সংকটের আরেকটি দিক অভ্যন্তরীণ: ইসরায়েলি সমাজ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং রাজনীতিবিদদের মধ্যে গভীর বিভেদ। এমনকি ট্রাম্পও সম্ভবত এই ব্যবধান দূর করতে বা মেরুকরণ শেষ করতে পারবেন না, যা ভবিষ্যতে আরও ঘনীভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও, ট্রাম্প সমানভাবে অকার্যকর প্রমাণিত হবেন, কারণ বাইডেন প্রশাসন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল ইস্যুতে আন্তর্জাতিক ঐকমত্যকে অস্বীকার করে আসছে। বর্তমান মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আইন পাশ করেছে কারণ তারা ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল।

নেতানিয়াহু যদি মনে করেন যে ট্রাম্প তাকে বাইডেনের চেয়ে ভালো কিছু দেবেন, তবে তিনি ভুল করছেন। বাইডেন ৭৬ বছরের ইতিহাসে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় আমেরিকান পৃষ্ঠপোষক বলে প্রমাণিত হয়েছেন।

বিদ্রুপাত্মকভাবে, ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিঃশর্ত সমর্থন দেশটির পতনের একটি কারণ হতে পারে।

‘আমেরিকার শত্রু হওয়া বিপজ্জনক হতে পারে, তবে বন্ধু হওয়া মারাত্মক,’ হেনরি কিসিঞ্জার একবার বলেছিলেন। তিনি ভুল বলেননি।

লেখক: ডা. রামজী বারুদ। প্রকাশিত হয়েছে মিডলইস্ট মনিটরে। বাংলায় অনুবাদ করেছেন মো. জামাল উদ্দিন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.