ব্রাজিলের ভরাডুবির ৫ কারণ

গত কয়েক বছর ধরে কঠিন সময় পার করছে ব্রাজিল। গত ২২ বছর ধরে ফিফা বিশ্বকাপ জিততে পারছে না তারা। কোপা আমেরিকার সবশেষ শিরোপাও এসেছে ২০১৯ সালে। কিন্তু ব্রাজিলের মতো দলের জন্য মহাদেশীয় এই ট্রফি কি যথেষ্ট? অবশ্যই নয়। কোপা আমেরিকার গত আসরের ফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে হেরেছে সেলেকাওরা। পতনের সেই শুরু। এবারের আসরে তো সেমিফাইনালেও উঠতে পারেনি তারা।

এবারের কোপা আমেরিকায় কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে ব্রাজিল। ছবি: এক্স

এই ব্যর্থতার দায় মেনে নিয়েছেন প্রধান কোচ ডরিভাল জুনিয়র। তবু তাকে রেখে দিয়েছে ব্রাজিল। তার অধীনে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে হলুদ শিবির। সেটির চূড়ান্ত প্রতিফলন দেখা গেল এবারের কোপা আমেরিকায়। কোনোরকম গ্রুপপর্বের বাধা পাড়ি দিয়েছে তারা। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকে উরুগুয়ের কাছে হার। অথচ নির্ধারিত সময়ের শেষের প্রায় কুড়ি মিনিট প্রতিপক্ষকে একজন কমে পেয়েও গোল করতে পারেনি ব্রাজিল।

একসময়ের প্রভাবশালী দলটার এমন হতশ্রী অবস্থা কেন? কেনই বা ল্যাটিন আমেরিকান জায়ান্টদের সুন্দর ফুটবল হারিয়ে যাচ্ছে? পেলে-সক্রেটিস-রোনালদো-জিকোদের দেশ বর্তমানে স্বাভাবিক খেলাটাই খেলতে পারছে না। মরক্কো, সেনেগালের মতো দলের বিপক্ষেও হারতে হয়েছে ব্রাজিলকে। সংকটের সময় কেউ ত্রাণকর্তা হয়েও আসছেন না।

কেন এমন পতন হলো ব্রাজিলের? দেখে নেওয়া যাক কিছু কারণ:

তরুণ ফুটবলারদের অর্থের লোভ: গোটা বিশ্বে ফুটবলার রপ্তানিতে শীর্ষে ব্রাজিল। দশকের পর দশক ধরে এমটিই হয়ে আসছে। কিন্তু সবশেষ দুই দশকে এর মাত্রাটা বেড়েছে। কয়েকগুণ তরুণ ফুটবলাররা অর্থের লোভে দেশ ছেড়ে পাড়ি জমাচ্ছেন ইউরোপিয়ান ফুটবলে। এতে করে জাতীয় দলের প্রতি নিবেদন কমছে তাদের।

সুন্দর ফুটবলের অনুপস্থিতি: ‘জোগো বোনিতো’ বা সুন্দর ফুটবলের জয়গান এখন আর দেখা যায় না ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে। সেলেকাওরা খেলতে পারছে না শৈল্পিক ফুটবল। সুন্দর ফুটবল থেকে অনেকটাই সরে এসেছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। নেপথ্য কারণ, দলটির বেশির ভাগ খেলোয়াড় খেলছেন ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোতে। সেখানে কোচদের নানা কৌশলে খেলতে হচ্ছে তাদের। এতে করে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের যে শিল্প সেটি হারিয়ে ফেলছেন তারা।

পছন্দসই কোচ না পাওয়া: ব্রাজিলের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ সঠিক দিক নির্দেশনার অভাব। পছন্দসই কোচ নিয়োগ দিতে পারছে না। দলটির কোচরা এসেও হিমশিম খাচ্ছেন। গত কয়েক বছর ধরে ব্রাজিলে চলছে কোচদের আসা-যাওয়ার মিছিল। ২০২২ বিশ্বকাপের পর থেকে এ পর্যন্ত তিনবার কোচ বদল হয়েছে সেলেকাওদের। সবাই অবশ্য দেশি কোচ।

কিন্তু ইউরোপিয়ান ফুটবলের যে পালাবদল সেটি সম্পর্কে তারা পুরোপুরি জ্ঞাত নন। তাদের কোচিংয়ের সঙ্গেও খাপ খাওয়াতে পারছেন না ফুটবলাররা। কেননা সারা বছর ইউরোপের ক্লাব ফুটবলেই সময় কাটাতে হয় খেলোয়াড়দের। এক্ষেত্রে ইউরোপের বিখ্যাত কোচ কার্লো আনচেলত্তিকে চেয়েছিল। কিন্তু ব্রাজিলকে হতাশ করে রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেছেন ইতালিয়ান কোচ।

ঘরোয়া ফুটবলের বাজে অবস্থা: ব্রাজিলের ঘরোয়া ফুটবল আগের মতো নেই। আধুনিক যুগের সঙ্গেও তাল মেলাতে পারছে না তারা। অথচ গত কয়েক বছর ধরে ল্যাটিন আমেরিকার ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর কোপা লিবার্তাদোরেসে চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে ব্রাজিলের ক্লাবগুলো। কিন্তু ক্লাব বিশ্বকাপে গেলেই ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর সঙ্গে পার্থক্য ফুটে উঠে তাদের।

গতবার ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংলিশ জায়ান্ট ম্যানচেস্টার সিটির কাছে ৪-০ গোলে হেরেছে ব্রাজিলের ক্লাব ফ্লুমিনেন্স। এই ফলই বলে দিচ্ছে দুই ক্লাব ও দেশের পার্থক্য কতটা। ব্রাজিলিয়ান ঘরোয়া ফুটবলের মান নিচের দিকে নামায় খেলোয়াড়রাও থাকছেন না। পাড়ি জমাচ্ছেন ইউরোপে। এটা এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেটি ঠেকানো গেল হয়তো এমন বিপর্যয়ে পড়তো না ব্রাজিলের ফুটবল।

নেইমারের ইনজুরি ও শূন্যতা: ব্রাজিল ফুটবলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন নেইমার। গত কয়েক বছরে দেশটির সেরা খেলোয়াড় হয়ে উঠেছেন তিনি। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তার ইনজুরি ভোগাচ্ছে ব্রাজিলকে। এবারও চোটের কারণে কোপা আমেরিকায় খেলা হয়নি তার। ক্যাসেমিরো এবং থিয়াগো সিলভার মতো পরীক্ষিত ফুটবলারদের অনুপস্থিতিও ভোগাচ্ছে ব্রাজিলকে। অথচ তাদের চেয়ে বেশি বয়সী পেপে এবারের ইউরোতে কি ফর্মটাই না দেখালেন। তাতে পরিষ্কার বয়স সবসময় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।