জটিল হলো ব্যালন ডি’অরের হিসেব

আগামী ২৮ অক্টোবরে দেওয়া হবে ব্যালন ডি’অর। ফ্রান্স ফুটবল সাময়িকীর এই পুরস্কারের দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন ভিনিচিয়াস জুনিয়র। কিন্তু কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে তার দল ব্রাজিল বিদায় নেওয়ায় কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন তিনি। এগিয়ে গেছেন জুডে বেলিংহাম। লড়াইয়ে আছেন কিলিয়ান এমবাপ্প এবং পেদ্রিও।

নিষেধাজ্ঞার কারণে কোয়ার্টার ফাইনালে ভিনিচিয়াস জুনিয়রকে পায়নি ব্রাজিল। ছবি: ফাইল

ব্রাজিলের রোনালদো নাজারিও, রিভালদো, রিকোর্ডো কাকা এবং নেইমার জুনিয়র গত মৌসুম শেষ হওয়ার পর থেকেই ভিনির পক্ষে বাজি ধরেছেন। কিন্তু উরুগুয়ের কাছে টাইব্রেকারে হারে ব্রাজিল তো কোপা আমেরিকা থেকে ছিটকেই গেছে, সঙ্গে ব্যালন ডি’অরের দৌড়েও বড়সড় একটা হোঁচট খেয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদ ফরওয়ার্ড।

এ বছর আন্তর্জাতিক ফুটবলে বড় দুটি টুর্নামেন্ট চলছে। বর্ষসেরা ফুটবলার নির্ধারণে তাই কোপা আমেরিকা ও ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ বড় প্রভাব রাখতে পারে। শেষ পর্যন্ত কে জিততে পারেন সেটির একটা আভাস মিলতে পারে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে। আগামী ১৪ জুলাই দুই টুর্নামেন্টেরই ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে।

অক্টোবরের শেষ দিকে বর্ষসেরা ফুটবলারের নাম ঘোষণা করবে ফ্রান্স সাময়িকী। এটি জয়ের জন্য খেলোয়াড়রা সময় পাচ্ছেন এক বছর। সময়ের হিসেবটা গত বছরের ১ আগস্ট থেকে এ বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত। ক্লাব ফুটবলের নতুন মৌসুম শুরু হবে আগাম মাস থেকে। অর্থাৎ লড়াইয়ে এগিয়ে যাওয়ার শেষ সময় কেবল সামনের এক সপ্তাহ।

ভিনি অবশ্য এখনও ভালোভাবে লড়াইয়ে আছেন। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে গত মৌসুমে ৩৯ ম্যাচে করেছেন ২৪ গোল। সঙ্গে অ্যাসিস্ট আছে ১১টি। ভিনির কিছু গোল আছে মহাগুরুত্বপূর্ণ সময়ের। এই যেমন স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে বার্সেলোনার বিপক্ষে তিনটি। একটি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে। এ ছাড়া টুর্নামেন্টের নক আউট পর্বেও একাধিক গোল করেছেন ব্রাজিলিয়ান ফরওয়ার্ড।

ব্রাজিলিয়ান তারকার দুর্দান্ত পারফর‌ম্যান্সের সুবাদে গত মৌসুমে রিয়াল জিতেছে চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং স্প্যানিশ লা লিগা। যেখানে মূল ভূমিকা ২৩ বছর বয়সী ভিনির। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে বড় কিছু করতে পারলেন না তিনি। কোপা আমেরিকায় দুটি গোল করেছেন ভিনি। সেটি অবশ্য গ্রুপপর্বে। টানা দুই ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখায় শেষ আটের ম্যাচে খেলতেও পারেননি তিনি। যা একরকম নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতোই। তার অনুপস্থিতিতে হেরে গেছে ব্রাজিল।

রিয়াল মাদ্রিদের সাফল্যে অবদান আছে ভিনির সতীর্থ বেলিংহামেরও। বার্নাব্যুর দলটির হয়ে অভিষেক মৌসুমে ঝড় তুলেছেন ইংলিশ মিডফিল্ডার। ৪২ ম্যাচে ২৩ গোল করেছেন তিনি। এ ছাড়া সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরও ১৩টি। জাতীয় দলেও দারুণ ছন্দে আছেন বেলিংহাম। শেষ ষোলোতে শেষ মুহূর্তে গোল করে তিনি বাঁচিয়ে দিয়েছেন ইংল্যান্ডের স্বপ্ন। গ্রুপপর্বে সার্বিয়ার বিপক্ষে করেছেন ম্যাচের একমাত্র ও জয়সূচক গোল।

ব্যালন ডি’অরের আরেক দাবিদার প্যারিস সেন্ট জার্মেইর (পিএসজি) ফরাসি ফরওয়ার্ড এমবাপ্পে। আগামী মৌসুম তিনি শুরু করতে যাচ্ছেন স্বপ্নের ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। তাকে লড়াইয়ে রাখছে গত মৌসুমে পিএসজির জার্সিতে পাওয়া সাফল্য। ফরাসি জায়ান্টদের ডাবলস জয়ে অবদান ছিল এমবাপ্পের। ৪৮ ম্যাচে তার গোল ৪৪টি। এ ছাড়া আরও কিছু গোলে অবদান রেখেছেন ফরাসি সেনসেশন।

এমবাপ্পের নৈপুণ্যে চ্যাম্পিয়নস লিগের গত মৌসুমে পিএসজি খেলেছে সেমিফাইনাল। কিন্তু ক্লাব ফুটবলের ছন্দ ফ্রান্সের হয়ে বয়ে আনতে পারছেন না তিনি। আসরে এখন পর্যন্ত কেবল এক গোল করেছেন। সেটিও পেনাল্টি থেকে। হয়তো বড় ম্যাচের জন্য সব তুলে রেখেছেন এমবাপ্পে। তেমনকিছু ঘটলে এবং ফ্রান্স ইউরোর চ্যাম্পিয়ন হলে ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে এগিয়ে যাবেন তিনিই। ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হলে সম্ভাবনা বাড়বে বেলিংহামের।

রিয়াল মাদ্রিদের তিন ফুটবলারের বাইরে আরও একজন আছেন ব্যালন ডি’অরের লড়াইয়ে। তিনি পেদ্রি। চোটের কারণে অবশ্য এবারের ইউরোতে আর স্পেনের হয়ে মাঠে নামতে পারবেন না তিনি। তবে যতটুকু সময় পেদ্রি খেলেছেন আলো ছড়িয়েছেন তাতে। গত মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটির ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জয়ে অবদান রেখেছেন পেদ্রি। ১২ গোলের সঙ্গে ১৫টি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি।

স্পেন ইউরো জিতলে বর্ষসেরার দৌড়ে এগিয়ে যেতে পারেন পেদ্রিও। এক ভিনিচিয়াসের কোপা আমেরিকার ব্যর্থতা ব্যালন ডি’অর নির্ধারণের হিসেবটা জটিল করে তুলেছে। ভিনির ব্যর্থতা অন্যদের বড় সুযোগ করে দিয়েছে। সেই সুযোগ এমবাপ্পে, বেলিংহামরা কাজে লাগতে পারেন কিনা সেটিই দেখার অপেক্ষা।