রাশিয়া এখন উচ্চ আয়ের দেশ! যুদ্ধের মধ্যেই অর্থনীতির উত্থান

পশ্চিমা বিশ্বের কঠোর নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেও উচ্চ আয়ের দেশের তালিকায় স্থান পেল রাশিয়া! বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়ার অর্থনীতি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে।

পুতিনের পরিচালনায় রাশিয়ার অর্থনীতি আরও মজবুত হয়েছে

রাশিয়ার এই সাফল্য বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ কারণ, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা বিশ্ব দেশটির উপর কঠোর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তারপরেও রাশিয়ার অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য হারে প্রবৃদ্ধিত হচ্ছে, যা অনেকের কাছে অপ্রত্যাশিত।

বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০২৩ সালে রাশিয়ার প্রকৃত (+৩.৬%) এবং নামমাত্র (+১০.৯%) জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে। মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ১১.২%। এই অর্থনৈতিক উত্থানের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে বিশ্বব্যাংক রাশিয়ার সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, বাণিজ্য (+৬.৮%), আর্থিক খাত (+৮.৭%) এবং নির্মাণ খাতের (+৬.৬%) উন্নতির কথা উল্লেখ করেছে।

রাশিয়ার এই সাফল্যের পেছনে রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের ভূমিকার কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তিনি পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার মোকাবেলায় এক ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধের’ ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার এই অর্থনৈতিক উত্থান অনেকের কাছে তার ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধ’ কৌশলের সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

শুধু রাশিয়া নয়, আলজেরিয়া, ইরান এবং মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনও এ বছর নিম্ন-মধ্যম-আয়ের দেশ থেকে উচ্চ-মধ্যম-আয়ের দেশের তালিকায় উন্নীত হয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত হওয়া সত্ত্বেও ইউক্রেনের এই অর্জন অবশ্যই প্রশংসনীয়।

অন্যদিকে, ভারত এখনও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশেই রয়েছে। শুধুমাত্র ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকা এ বছর নিম্ন-মধ্যম-আয়ের বিভাগে নেমে গেছে।

যুদ্ধের মধ্যেও রাশিয়ায় আয় বৃদ্ধি কেন?

বিশ্বের আর কোনো অর্থনীতি, এমনকি চীনের অর্থনীতিও রাশিয়ার মতো আর্থিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনের মুখোমুখি হয়নি, গত মাসে কথাগুলো বলেছিলেন রাশিয়ার বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং প্রিমাকভ জাতীয় গবেষণা ইনস্টিটিউট অফ ওয়ার্ল্ড ইকোনমি অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনের সভাপতি অধ্যাপক আলেকজান্ডার ডিনকিন।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জ্বালানি সম্পদ, কাঁচামাল এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের দক্ষ শ্রমশক্তি রয়েছে। আমাদের মৌলিক বিজ্ঞান বিশ্বমানের। আমাদের জাতীয় উদ্ভাবন ব্যবস্থা প্রযুক্তিগত সার্বভৌমত্বের কাজগুলি সফলভাবে সমাধান করছে এবং খালি বাজারের সুযোগগুলো কাজে লাগাচ্ছে।’

গত মাসে সেন্ট পিটার্সবার্গ ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ফোরামে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ার অর্থনীতি ক্রমবর্ধমান এবং দেশটি আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারিত করেছে।

রাশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হলো ইউক্রেন যুদ্ধ। রাশিয়ার জনগণের কাছে আমদানি করা কিছু পণ্যের সরবরাহ কমে গেছে এবং বেশিরভাগ বৈশ্বিক ব্র্যান্ড বাজার ছেড়ে চলে গেছে। রাশিয়ার বেশিরভাগ নাগরিকের জন্য অর্থনৈতিকভাবে খুব বেশি কিছু পরিবর্তন হয়নি। সামরিক সরঞ্জামের জন্য বিশাল রাষ্ট্রীয় ব্যয় এবং স্বেচ্ছাসেবক সৈন্যদের মোটা অঙ্কের অর্থ প্রদান অর্থনীতিকে উদ্দীপিত করেছে।

লন্ডন-ভিত্তিক ইউরোপীয় পুনর্গঠন ও উন্নয়ন ব্যাংকের (ইউরোপীয় পুনর্গঠন ও উন্নয়ন ব্যাংক) মতে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ার অর্থনীতি চলতি বছরে আরও প্রবৃদ্ধি পাবে।

ইউরোপীয় পুনর্গঠন ও উন্নয়ন ব্যাংক ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে রাশিয়ার অর্থনীতি ২০২৪ সালে ২.৫ শতাংশ প্রসারিত হবে। তবে ২০২৩ সালের ৩.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় এটি একটি উল্লেখযোগ্য মন্দা।

ইউরোপীয় পুনর্গঠন ও উন্নয়ন ব্যাংক-র প্রধান অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ‘রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা একটি গভীর অর্থনৈতিক ও আর্থিক সংকটের দিকে পরিচালিত করবে, এমনটা আশা করা অবাস্তব ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাশিয়া যুদ্ধের জন্য তার অর্থনীতিকে পুনঃকেন্দ্রীভূত করেছে। সুতরাং এটি দ্রুত প্রবৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করছে। তবে এই প্রবৃদ্ধি কি জনগণের মঙ্গলের দিকে অনুবাদিত হচ্ছে? সেটা সন্দেহজনক।’

উল্লেখ্য, বিশ্ব ব্যাংকের হিসেব মতে নাগরিকদের বার্ষিক আয়ের ভিত্তিতে বিশ্বের সমস্ত দেশকে মূলত চারটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যেসব দেশের নাগরিকেরা বার্ষিক এক হাজার ১৪৫ ডলারের কম আয় করে থাকে সেগুলোকে বলা হয় নিম্ন আয়সম্পন্ন দেশ। এক হাজার ১৪৬ ডলার থেকে চার হাজার ৫১৫ ডলার পর্যন্ত আয় করা নাগরিকদের দেশকে বলা হয় নিম্ন-মধ্য আয়সম্পন্ন দেশ। আয়ের পরিমাণ চার হাজার ৫১৬ থেকে ১৪ হাজার পাঁচ ডলার পর্যন্ত হলে সে দেশকে বলা হয় উচ্চ-মধ্য আয়সম্পন্ন দেশ। আর ১৪ হাজার পাঁচ ডলারের বেশি আয়কারী নাগরিকদের দেশকে বিশ্ব ব্যাংক উচ্চ আয়সম্পন্ন দেশ বলে আখ্যা দিয়ে থাকে।