আপনি পড়ছেন

ইসরায়েল কখনো তার ভুল থেকে শিক্ষা নেয় না। গাজায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন তা আসলে অতীতে অন্যান্য ইসরায়েলি নেতাদের ব্যবহৃত কৌশলের একটি নিম্নমানের নকল। যদি এই কৌশলগুলো সফল হতো, তাহলে ইসরায়েল আজ এই অবস্থানে থাকতো না।

israeli tanks and dr ramzy baroudডা. রামজী বারুদ (ছবিতে গোল চিহ্নিত)

গাজায় নেতানিয়াহুর প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে অস্পষ্টতার মূল কারণ হলো, গাজা উপত্যকায় তাদের এই নির্মম যুদ্ধের পরিণাম কী হতে পারে তা তিনি কিংবা তার জেনারেলরা কেউই নির্ধারণ করতে পারছেন না। এই যুদ্ধে ইতিমধ্যেই হাজার হাজার নিরীহ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

নেতানিয়াহু যতই চেষ্টা করুন না কেন, অতীতের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবেন না।

১৯৬৭ সালের জুন মাসে গাজা, পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেম দখলের পর, ইসরায়েলি রাজনীতিবিদ এবং জেনারেলরা অনেক বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছিলেন। সরকার আরব বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের বিরাট সামরিক বিজয়কে স্থায়ী দখলদারিত্বে রূপান্তর করতে চেয়েছিল। আর সেনাবাহিনী নতুন দখলকৃত অঞ্চলগুলোকে 'বাফার জোন', 'নিরাপত্তা করিডোর' তৈরি করতে এবং ফিলিস্তিনিদের আরও শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলতে ব্যবহার করতে চেয়েছিল।

সরকার এবং সামরিক বাহিনী, উভয় পক্ষই তাদের এই ভিশন বাস্তবায়নের জন্য নতুন উপনিবেশ স্থাপনকে নিখুঁত সমাধান হিসেবে দেখেছিল। বর্তমানে যেসব স্থানে অবৈধ বসতি স্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো মূলত তৎকালীন শ্রমমন্ত্রী ইগাল অ্যালনের পরিকল্পনা অনুসারে দুটি বিশাল নিরাপত্তা করিডোরের অংশ হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল।

অ্যালনের পরিকল্পনা বেশ কিছু বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। এই পরিকল্পনার অন্যান্য দিকের মধ্যে ছিল জর্ডন নদীর পাশে একটি নিরাপত্তা করিডোর এবং ১৯৬৭ সালের পূর্বে ইসরায়েলের সীমানা 'গ্রিন লাইন' বরাবর আরেকটি নিরাপত্তা করিডোর নির্মাণের ডাক। এই নতুন সীমানা চিহ্নিতকরণের উদ্দেশ্য ছিল ইসরায়েলের সীমানা আরও বিস্তৃত করা - যা কখনোই স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়নি - যাতে করে ইসরায়েল আরও বেশি কৌশলগত সুবিধা পায়। এই পরিকল্পনাটিই ছিল মূল সংযুক্তিকরণ পরিকল্পনা, যা নেতানিয়াহু ২০১৯ সালে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন এবং বর্তমান অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ তা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন।

নেতানিয়াহু গাজায় তার এই বিপর্যয়কর যুদ্ধের সমাধান খুঁজে বের করার আশায় পূর্ববর্তী সরকারগুলোর নথিপত্র ঘাঁটছেন। এখানেও, অ্যালনের পরিকল্পনা প্রাসঙ্গিক।

১৯৭১ সালে, তৎকালীন ইসরায়েলি জেনারেল এরিয়েল শ্যারন, গাজার ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে অ্যালনের ধারণা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন, তবে তার নিজস্ব কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে। তিনি ‘শ্যারনের পাঁচ আঙুল’ নামে পরিচিত একটি কৌশল উদ্ভাবন করেছিলেন।

এই আঙুলগুলো আসলে সামরিক অঞ্চল এবং উপনিবেশকে নির্দেশ করে, যার উদ্দেশ্য ছিল গাজা উপত্যকাকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করা এবং দক্ষিণের শহর রাফাহকে সিনাই অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করা।

এই লক্ষ্যে, গাজাজুড়ে, বিশেষ করে উত্তরে, হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছিল। দক্ষিণাঞ্চলে, হাজার হাজার ফিলিস্তিনি পরিবার, বিশেষ করে বেদুইন উপজাতিদের, জাতিগত নিধনযজ্ঞের মাধ্যমে সিনাই মরুভূমিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

অ্যালনের পরিকল্পনারই একটি বর্ধিত রূপ ছিল শ্যারনের এই পরিকল্পনা, যা কখনোই পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। যদিও ফিলিস্তিনিদের জীবন ও সম্পত্তির ওপর চরম নির্যাতনের মাধ্যমে এর অনেক দিক বাস্তবায়িত হয়েছিল। ফিলিস্তিনিরা বহু বছর ধরে এর প্রতিরোধ করে আসছিল। গাজার জনগণের এই ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্যারনকে গাজা সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করতে বাধ্য করে। ২০০৫ সালে তিনি তার সামরিক পুনর্বিন্যাস এবং পরবর্তীকালে গাজায় অবরোধ আরোপকে 'বিচ্ছিন্নতার পরিকল্পনা' বলে অভিহিত করেছিলেন।

এই তুলনামূলকভাবে নতুন পরিকল্পনা, যা নেতানিয়াহু তখন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং এখন পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন, তা গাজায় ইসরায়েলের ব্যর্থ দখলদারিত্বের যুক্তিসঙ্গত উত্তর বলে মনে হয়েছিল। ৩৮ বছরের সামরিক দখলদারিত্বের পর, ফিলিস্তিনিদের কাছে 'বুলডোজার' নামে পরিচিত অভিজ্ঞ ইসরায়েলি জেনারেল বুঝতে পেরেছিলেন যে গাজাকে কখনই দমন করা সম্ভব নয়, শাসন করা তো দূরের কথা।

শ্যারনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরিবর্তে, নেতানিয়াহু আবার সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করছেন।

গাজায় তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে নেতানিয়াহু খুব বেশি কিছু প্রকাশ করেননি। তবে তিনি গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিম তীরের ওপর ‘নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ’ বজায় রাখার কথা বারবার বলেছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি বলেছিলেন, ইসরায়েল ‘সমগ্র গাজা উপত্যকায় অভিযান পরিচালনার স্বাধীনতা বজায় রাখবে’।

তারপর থেকেই, তার সেনাবাহিনী মধ্য গাজায় নেটজারিম করিডোর নামে পরিচিত একটি দীর্ঘমেয়াদী সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ শুরু করেছে - এটি সামরিক পথ এবং ছাউনির একটি বিশাল 'আঙুল' যা গাজাকে দু ভাগে বিভক্ত করে।

২০০৫ সালে গাজা সিটির দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি বসতি স্থানান্তরের পর নেটজারিম নামকরণ করা হয়। এই অঞ্চলের দুটি প্রধান সড়ক, সালাহ আল-দীন রোড এবং উপকূলীয় রাশিদ রোডের ওপরও ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।

রাফাহ এবং মিশরীয় সীমান্তের মধ্যে অবস্থিত ফিলাডেল্ফি করিডোর, ৭ মে ইসরায়েল দখল করে নেয়। এটিকে আরেকটি ‘আঙুল’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গাজার সমস্ত সীমান্ত অঞ্চলে ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত ‘বাফার জোন’ তৈরি করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো গাজাকে সম্পূর্ণরূপে শ্বাসরুদ্ধকর করে তোলা এবং ইসরায়েলকে ত্রাণ সহায়তার ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রদান করা।

তবে নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা ব্যর্থতায় ধাবিত হবে।

১৯৬৭ সালে গাজায় ইসরায়েলের দখলদারিত্বের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বর্তমানের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। তখনকার ঘটনা আরবদের একটি বড় ধরনের পরাজয়ের ফল হিসেবে ঘটেছিল, অন্যদিকে বর্তমান পরিস্থিতি ইসরায়েলের সামরিক ও গোয়েন্দা ব্যর্থতার পরিণতি।

এছাড়াও, আঞ্চলিক পরিস্থিতিও ফিলিস্তিনের পক্ষে । গাজায় ইসরায়েলের চলমান গণহত্যা সম্পর্কে বিশ্ববাসী অবগত, যার ফলে স্থায়ী যুদ্ধ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, বর্তমান প্রজন্মের গাজার মানুষ অনেক বেশি সাহসী এবং শক্তিশালী। তাদের এই চলমান প্রতিরোধ সমগ্র ফিলিস্তিনজুড়ে একটি জনপ্রিয় জাগরণের প্রতিফলন।

১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েলে যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা আজ আর নেই। বর্তমানে ইসরায়েল অনেক ভাগে বিভক্ত।

গাজায় স্থায়ীভাবে অবস্থান বজায় রাখার মূর্খতাপূর্ণ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত নেতানিয়াহুর, কারণ গাজাকে পরাজিত করা তার দেশের অনেক উচ্চপদস্থ সামরিক ব্যক্তিদের জন্যেও একটি অসম্ভব কাজ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

লেখক: ডা. রামজী বারুদ। লেখাটি মিডলইস্ট মনিটরে প্রকাশিত হয়েছে। অনুবাদ করেছেন মো. জামাল উদ্দিন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.