‘দাফনের ৯ দিন পর’ বাড়ি ফিরলেন নিখোঁজ তরুণী!

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ‘দাফনের নয় দিন পর বাড়ি ফিরে’ এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছেন নিখোঁজ তরুণী রোকসানা আক্তার (৩০)। গত বুধবার (২৬ জুন) ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার গুনবতী ইউনিয়নের রাজবল্লবপুর গ্রামে। রোকসানা আক্তার ওই গ্রামের মরহুম তাজুল ইসলামের মেয়ে।

রোকসানা আক্তার

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মে মাসের শেষ দিকে রোকসানা চৌদ্দগ্রামের নিজ বাড়ি থেকে চট্টগ্রামের ষোলশহরে ছোট ভাই সালাহ উদ্দিনের বাসায় বেড়াতে যান। ১ জুন ভোরে তিনি কাউকে না জানিয়ে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান। এরপর আত্মীয়-স্বজনসহ সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

গত ১৭ জুন ঈদের দিন বিকেলে ফেনী শহরে থাকা খালাতো বোন হাজেরা আক্তার ও খালাতো ভাই শাহজাহান খবর পান, শহরের জিয়া মহিলা কলেজের সামনে ড্রেনের মধ্যে এক নারীর মরদেহ পড়ে আছে। তারা সেখানে গিয়ে লাশের সঙ্গে রোকসানা আক্তারের চেহারার সঙ্গে মিল দেখে তার ভাই এবায়দুল হককে খবর দেন।

এবায়দুল হক সেখানে পৌঁছতে পৌঁছতে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে মর্গে পাঠায়। রাতে এবায়দুল হক জিয়া মহিলা কলেজের ড্রেন এলাকায় পৌঁছে আশপাশের মানুষকে বোনের ছবি দেখিয়ে জানতে চাইলে সবাই ছবির সঙ্গে মরদেহের মিল থাকার কথা জানান।

পরে তিনি আত্মীয়-স্বজনসহ ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে লাশ উদ্ধারকারী উপ-পরিদর্শক প্রতুল দাসের সঙ্গে দেখা করে রোকসানার ছবি দেখান। পরে দীর্ঘ যাচাই-বাছাই ও ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন পুলিশ এবায়দুল হকের হাতে মরদেহ হস্তান্তর করে। সেদিনই আছরের নামাজের পর তার কাফন-দাফন সম্পন্ন হয়।

এ ঘটনার নয় দিন পর গত ২৬ জুন বিকেলে রোকসানা বাড়ি ফিরেন। জিজ্ঞাসাবাদের তিনি জানান, আমি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় চলে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে একটি চাকরিতেও ঢুকে পড়ি। তবে অসুস্থ থাকায় কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। তবে সঙ্গে তেমন পোশাক-আশাক না থাকায় আমি বাড়িতে ফিরে এসেছি।

তিনি আরও বলেন, আমি ফিরে আসায় সবাই হতবাক হয়ে গেছেন। পরে জানতে পারি, আমি নাকি মারা গেছি। আমার লাশও নাকি দাফন হয়ে গেছে!

এ ব্যাপারে রোকসানার ভাই এবায়দুল হক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বোনের খবর পাচ্ছিলাম না। অবশেষে খালাতো ভাই-বোনের সংবাদ পেয়ে তার ব্যাপারে খোঁজখবর নেই। সবাই বলে মরদেহ আর বোনের ছবি একই। পরে পুলিশও আমাদের হাতে মরদেহটি হস্তান্তর করে। এখন আমার বোন ফিরে এসেছে। আমরা বিষয়টি ফেনী মডেল থানায় অবহিত করেছি।

ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক প্রতুল দাস বলেন, উদ্ধার করা মরদেহটি অনেকটাই বিকৃত ছিল। এবায়দুল হক ও তার স্বজনরা উদ্ধারকৃত মরদেহটি রোকসানার বলে শনাক্ত করে নিয়ে যায়। এখন যেহেতু তাদের বোন সুস্থ অবস্থায় সশরীরে বাড়িতে ফিরেছে, তাই আমরা বিষয়টি নতুন করে তদন্ত করে দেখব।