দ. আফ্রিকার অবিশ্বাস্য হার, চ্যাম্পিয়ন ভারত

ক্রিকেটের চিরকালীন অপয়া দল দক্ষিণ আফ্রিকা। আইসিসির টুর্নামেন্টে নক আউট পর্বে টানা সাত ম্যাচ হেরেছে প্রোটিয়ারা। এবার সেই দুঃখ ঘুচিয়েছে আফ্রিকানরা। আশা জাগিয়েছিল স্বপ্নের প্রথম শিরোপারও। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে শেষ সময়ে পুরোনোরূপে হাজির হলো তারা। ফের চোক করল প্রোটিয়ারা।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় শিরোপা নিশ্চিত হওয়ার পর ভারতের উল্লাস। ছবি: আইসিসি

প্রায় হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচটা অবিশ্বাস্যভাবে হেরে বসল দক্ষিণ আফ্রিকা। আজ শনিবার বার্বাডোজে প্রোটিয়াদের কাঁদিয়ে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় শিরোপা জিতল ভারত। রোহিত শর্মার দল জিতেছে শেষ ওভারে; সাত রানের ব্যবধানে। এই হারে পুরোনো অপবাদ নতুন করে গায়ে মাখাল দক্ষিণ আফ্রিকা।

চ্যাম্পিয়ন হতে ৩০ বলে ৩০ রানের সহজ সমীকরণ ছিল আফ্রিকানদের সামনে। উইকেটে ছিলেন বিধ্বংসী হয়ে ওঠা হেনরিখ ক্লাসেন ও ঝড় শুরু করা ডেভিড মিলার। এরপরই রূপকথার এক প্রত্যাবর্তন করে ভারত। ১৬ থেকে ১৯ এই চার ওভারে স্রেফ ১৪ রান দেয় তারা।

শেষ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে ১৬ রানের চ্যালেঞ্জ। সহজ ম্যাচ কঠিন করে ফেলা প্রোটিয়ারা অনুমিতভাবেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। হার্দিক পান্ডিয়ার শেষ ওভারে তারা নিতে পারল আট রান। সঙ্গে হারাতে হয়েছে দুই উইকেট। একই সঙ্গে বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগটাও হারিয়ে ফেলল দলটি।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হলো ভারত। এর আগে ২০০৮ সালে প্রথম আসরের শিরোপা জিতেছিল তারা। ১০ বছর আগে বাংলাদেশ বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠলেও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে যায় ভারতীয়রা। দীর্ঘ এক দশক পর রাজত্ব উদ্ধার করল উপমহাদেশের দলটি।

বার্বাডোজে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে সাত উইকেটে ১৭৬ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ তোলে ভারত। জবাবে আট উইকেটে ১৬৯ রান তুলতে সক্ষম হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টানা আট জয়ের পর এটাই প্রথম হার এইডেন মার্করামের দলের। দারুণ ব্যাটিংয়ে ফাইনাল সেরা হয়েছেন বিরাট কোহলি।

রান তাড়ায় শেষের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটাও কঠিন ছিল। ১২ রানে দুই উইকেট হারিয়ে বসে তারা। পরে দারুণভাবে লড়াইয়ে ফিরে আসে দলটি। শুরুর জোড়া ধাক্কা সামাল দেন কুইন্টন ডি কক ও ত্রিস্টান স্টাবস। টেনে ধরেন উইকেটের রাশ। ৩১ বলে ৩৯ রানে ফিরে যান ওপেনার ডি কক।

২১ বলে ৩১ রানে বিদায় নেন স্টাবস। এরপর উইকেটে এসেই তাণ্ডব শুরু করেন হেনরিখ ক্লাসেন। ২৭ বলে ৫২ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন তিনি। তার সঙ্গী ডেভিড মিলার ১৭ বলে ২১ রানে আউট হন। কিন্তু বিফলে গেছে তাদের ঝোড়ো ব্যাটিং। ট্রফি যে আফ্রিকানদের ভাগ্যে নেই!

প্রায় হারতে বসা ভারতকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দিয়েছেন বোলাররা। টুর্নামেন্টজুড়ে আলো ছড়ানো জাস্প্রিত বুমরাহর হাত ধরেই প্রত্যাবর্তনের শুরু করে ভারতীয়রা। চার ওভারে স্রেফ ১৮ রানে দুই উইকেট নেন বুমরাহ। সমান ওভারে ২০ রানে সমান শিকার আর্শদীপ সিংয়েরও। হার্দিক তিন ওভারে কুড়ি রানের বিনিময়ে নেন তিন উইকেট। অথচ সেরার পুরস্কার পেলেন না কেউ!

এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বিস্ফোরক শুরু করে ভারত। প্রথম নয় বলে বিনা উইকেটে ২৩ রান তোলেন কোহলি ও রোহিত। এরপরই কেশভ মহারাজের জোড়া আঘাতে প্রত্যাবর্তন করে দক্ষিণ আফ্রিকা। কমে আসে ভারতের রানের গতি। পঞ্চম ওভারে ৩৪ রানে দলের তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে সাজঘরে ফিরে যান সূর্যকুমার যাদব।

শুরুর দিকে তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ভারত। সূর্যর মতো দুই অংকে যেতে পারেননি আউট হওয়া বাকি দুজনও। রোহিত ফেরেন নয় রানে। ঋষভ প্যান্ট খুলতে পারেননি রানের খাতা। তবে প্রান্ত আগলে রেখে ভারতের ইনিংসের হাল ধরেন কোহলি। চতুর্থ উইকেট জুটিতে তাকে যোগ্য সঙ্গটাই দিয়েছেন অক্ষর প্যাটেল।

দুজন মিলে গড়েন ৭২ রানের জুটি। ভারত ফেরে লড়াইয়ে। জুটি ভাঙে অক্ষরের বিদায়ে। হাফসেঞ্চুরির আভাস নিয়ে ফিরেছেন মিডল অর্ডারের এই ব্যাটার। ৩১ বলে ৪৭ রানে আউট হন অক্ষর। ততক্ষণে কোহলি তুলে নিয়েছেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ৩৮তম ফিফটি।

৫৯ বলে ৭৬ রানে বিদায় নেন তিনি। ইনিংস সাজান ছয় চার ও দুই ছয়ে। ইনিংসের শেষ দিকে ঝড় ওঠে শিবাম দুবের ব্যাটে। ১৬ বলে ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ২৩ রানে দুই উইকেট নেন মহারাজ। ২৬ রানে দুটি শিকার অ্যানরিচ নর্তজের। এ ছাড়া মার্কো জ্যানসেন ও কাগিসো রাবাদা নেন একটি করে উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ১৭৬/৭ (২০ ওভার)।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৬৯/৮ (২০ ওভার)।
ফল: ৭ রানে জিতে চ্যাম্পিয়ন ভারত।
ফাইনাল সেরা: বিরাট কোহলি (ভারত)।