চট্টগ্রামে বে টার্মিনাল: ৬৫ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

চট্টগ্রামে বে টার্মিনাল নির্মাণে ৬৫ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। শনিবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এই অর্থায়নে বাংলাদেশের বৈশ্বিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। বন্দরের অপারেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি খরচ কমাতেও সহায়তা করবে নতুন এই টার্মিনাল।

বিশ্বব্যাংকের লোগো

'বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট' এর আওতায় ৬ কিলোমিটার জুড়ে একটি আবহাওয়া-সহিষ্ণু ব্রেকওয়াটার নির্মাণ করা হবে যা ঢেউ, স্রোত এবং চরম আবহাওয়া থেকে বন্দরকে রক্ষা করবে। এছাড়াও, বন্দরের অভ্যন্তরীণ অংশ, প্রবেশপথ এবং সংযোগ চ্যানেলগুলো খনন করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

আন্তর্জাতিক মানের অপারেটরদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই আধুনিক বে টার্মিনালে পানাম্যাক্স জাহাজের মতো বৃহদাকার জাহাজ ভিড়তে পারবে। ফলে জাহাজের অপেক্ষার সময় উল্লেখযোগ্য হারে কমবে, যা প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ মার্কিন ডলার সাশ্রয় করবে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের ৯০ শতাংশেরও বেশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং ৯৮ শতাংশ কন্টেইনার ট্র্যাফিক পরিচালনা করে থাকে। তবে, সীমিত সময়ের জন্য শুধুমাত্র ছোট ফিডার জাহাজ এখানে ভিড়তে পারে।

‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মূলত চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর নির্ভরশীল, যা ব্যাপকভাবে ধারণক্ষমতার সঙ্কটে ভুগছে,’ বলেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক।

তিনি আরও বলেন, ‘বে টার্মিনাল প্রকল্পটি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এটি বন্দরের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পরিবহন খরচ ও সময় হ্রাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রতিযোগিতাকে আরও উন্নত করবে এবং গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক বাজারগুলিতে নতুন নতুন সুযোগ তৈরি করবে।’

এছাড়াও, প্রকল্পটি কন্টেইনার টার্মিনালের উন্নয়নের জন্য বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে। সরকারি তহবিলের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকের এই বিনিয়োগ বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে এবং সামগ্রিকভাবে বে টার্মিনাল উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকি হ্রাস করবে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বেসরকারি খাতের শাখা, আইএফসি, প্রস্তাবিত বেসরকারি খাতের নেতৃত্বাধীন টার্মিনালগুলোর একটিতে বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করছে।

‘বে টার্মিনাল দেশের সমুদ্রবন্দর অবকাঠামোকে আধুনিকীকরণ এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে সহায়তা করবে,’ বলেন প্রকল্পটির টিম লিডার এবং বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ পরিবহন বিশেষজ্ঞ হুয়া ট্যান।

চট্টগ্রাম বন্দরের পশ্চিমে আনন্দনগর / সন্দ্বীপ চ্যানেলে অবস্থিত বে টার্মিনালটি ঢাকার সঙ্গে বিদ্যমান সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার কাছাকাছি অবস্থিত। এই টার্মিনালটি বাংলাদেশের মোট কন্টেইনার পরিবহনের ৩৬ শতাংশ পরিচালনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে জাহাজ কোম্পানি, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, আমদানিকারক, রপ্তানিকারক এবং ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার সহ দশ লক্ষাধিক মানুষ, যাদের অর্ধেক নারী, টেকসই পরিবহন পরিষেবার উন্নত সুবিধা লাভ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ৩.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেকর্ড পরিমাণ অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যার মধ্যে এই প্রকল্পটিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য বিশ্বব্যাংক ছিল প্রথম উন্নয়ন অংশীদারদের মধ্যে অন্যতম। এই সময়কালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে প্রায় ৪২.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান, সুদমুক্ত এবং রেয়াতি ক্রেডিট হিসেবে প্রদান করেছে বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।