রাহুল গান্ধী: লোকসভায় বিরোধীদলীয় নেতার অগ্নিপরীক্ষা

এক দশক শূন্য থাকার পর এবার আনুষ্ঠানিকভাবেই একজন বিরোধীদলীয় নেতা পেয়েছে ভারতের লোকসভা। এবার নির্বাচনে ভোটের ফল হিসাবে ভারতের সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদটি পূরণ করেছেন কংগ্রেস পার্টির রাহুল গান্ধী। পদে থেকে রাহুল গান্ধীকে একদিকে যেমন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের ‘একতরফা’ সিদ্ধান্তের লাগাম টেনে ধরতে হবে, তেমনি তার জন্য দলের মধ্যে নিজের ভাবমূর্তি পুনরুজ্জীবিতের অগ্নিপরীক্ষাও বটে।

ভারতের লোকসভায় বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এই প্রথম লোকসভায় প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পেলেন নরেন্দ্র মোদি। রাহুল এখন সরকারের সব হাই-প্রোফাইল কমিটিগুলোর অংশ হবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কাজকর্মে ভারসাম্য আনার ভূমিকা পালন করতে পারবেন। পদগুলোতে থেকে সর্বদা সরকারকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা নিশ্চিত করবেন রাহুল গান্ধী। বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে নতুন ভূমিকায় বুধবারই প্রথম লোকসভায় প্রবেশ করেন রাহুল।

২০১৪ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকার গঠন করেন বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি। তখন থেকেই সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার সাংবিধানিক পদটি খালি ছিল। পদটি দাবি করার জন্য লোকসভায় ৫৪৩ আসনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ১০ শতাংশ বা ৫৫টি আসনও জিতেনি কোনো দল। তবে এবারের সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস এককভাবে ৯৯ আসন পেয়েছে।

কংগ্রেসের নেতৃত্বে ‘ইনডিয়া’ জোট গড়ে বিজেপিবিরোধী দলগুলো এবার লোকসভা ভোটে ২৩২ আসন জিতে নিয়েছে। তাতে আগের পরপর দুইবার বিপুল বিজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি বড় ধাক্কা খেয়েছে, হারিয়েছে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা। ‘এনডিএ’ জোটের মিত্রদের সহায়তায় তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসতে হয়েছে নরেন্দ্র মোদিকে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের লোকসভা নির্বাচন ভারতের গণতন্ত্রের জন্য একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। বিরোধীরা এতদিন বারবার শাসকদল বিজেপির বিরুদ্ধে যে কর্তৃত্ববাদের অভিযোগ তুলেছে, সে জন্য এবার মোদি সরকারকে জবাবদিহি করতে পারবে।

নয়াদিল্লির প্রখ্যাত রাজনৈতিক ভাষ্যকার নীরজা চৌধুরী বলেন, ভারতের লোকসভা এবার একটি অশান্ত পার্লামেন্ট হতে চলেছে এবং কেননা, বিরোধীরা এবার সরকারকে ধরতে পারবে। একটি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে মোদি সরকারের একতরফাভাবে কোনো বিল পাস কঠিন করে তুলবেন রাহুল ও তার সঙ্গীরা। এই ভূমিকাটি একজন নেতা হিসাবে রাহুল গান্ধীর দক্ষতাও পরীক্ষা করবে।

নীরজা চৌধুরী আরও বলেন, রাহুল ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজনীতিতে রয়েছেন এবং পাঁচ মেয়াদে এমপি হয়েছেন। তবে কখনও মন্ত্রী হননি বা দলকে সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী করতে পারেননি। এখন থেকে তাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে এবং যা ভুল হয় বা যা সঠিক হয়, তার জন্য তিনিই দায়বদ্ধ হবেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুগত শ্রীনিবাসরাজু বলেন, লোকসভায় বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে নতুন ভূমিকা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত তার ভিতরে একটি নতুন আত্মবিশ্বাসের ইঙ্গিত দেয়। তবে তাকে ভবিষ্যত বিনির্মাণে এগোতে হবে সাবধানে।

শ্রীনিবাসরাজু মনে করেন, রাহুলের নতুন ভূমিকা কংগ্রেসের একজন নেতা হিসেবে তার গত ২০ বছরে খোয়ানো ভাবমূর্তি পুনরুজ্জীবিত করতেও সাহায্য করবে।

রাহুল গান্ধী ২০০৪ সালে রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং ২০১৭ সালে কংগ্রেসের সভাপতি হন। তবে ২০১৯ সালের নির্বাচনে দলের ভরাডুবির কারণে পদত্যাগ করেন। এবার নির্বাচনে কেরালা রাজ্যের ওয়ানাদ ও উত্তর প্রদেশের রায়বেরেলি- দুটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই বিপুল ভোটে জিতেছেন রাহুল গান্ধী। সূত্র: বিবিসি।