ভারতের সঙ্গে চুক্তি: জাতীয় স্বার্থে আঘাত, বলছে বিএনপি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরকালে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলোকে 'জাতীয় স্বার্থবিরোধী' বলে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব চুক্তির ফলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঙ্গলবার গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এই চুক্তিগুলোর প্রতিবাদে আগামী শুক্রবার (২৮ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে মোট দশটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। মির্জা ফখরুল প্রশ্ন তুলেছেন, এসব চুক্তি থেকে বাংলাদেশের কী লাভ হবে?

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘বিএনপি দেশের স্বার্থে সৃষ্টি হওয়া একটি রাজনৈতিক দল। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বিএনপি সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’

তিনি স্পষ্ট করে বলেন, বিএনপির এই আন্দোলন ভারতের বিরুদ্ধে নয়, বরং বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে। তার মতে, সরকার ভারতের কাছে দেশের দাবি আদায়ে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পানি বণ্টনের সমস্যা সমাধান না করেই তিনি (প্রধানমন্ত্রী) চুক্তি স্বাক্ষর করতে চান। তিস্তা প্রকল্পের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে সেই ইস্যু নিষ্পত্তি না করেই, কারণ এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।’

তিনি অভিযোগ করেন, এই ‘অবৈধ সরকার’ বাংলাদেশকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল করে তুলতে ষড়যন্ত্র করছে।

এসব চুক্তিতে বাংলাদেশের কী লাভ?

ভারত থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রী রেল যোগাযোগ চুক্তিকে 'যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচন' বলে অভিহিত করেছিলেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘চিকেন নেক (ভারতের একটি সংকীর্ণ ভূখণ্ড) ব্যবহার না করে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে করিডোর তৈরি করে বাংলাদেশের কী লাভ? এর সমস্ত লাভই তো তাদের (ভারতের)।"

চুক্তি নিয়ে বিএনপির এই সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘এখন আর জানালা বন্ধ করে রাখার দিন নেই। বিএনপি কি তা-ই চায়?’

জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কখনোই না। আমাদের জানালা সবসময় খোলা থাকবে। যোগাযোগ থাকবে, তবে তা আমাদের নিজস্ব স্বার্থের বিনিময়ে নয়। পানি সমস্যার সমাধান না করে কোনো চুক্তি হবে না। আপনারা (প্রধানমন্ত্রী) পানি নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। সীমান্তে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। সেই সব বিষয়ে কোনো কথা কি এই চুক্তিতে ছিল? না, কিছুই ছিল না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তারা মনে করেন, এই চুক্তিগুলো বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করেনি।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়ে উদ্বেগ

সাম্প্রতিককালে নাফ নদীতে মিয়ানমার নৌবাহিনীর গুলিতে বাংলাদেশি জাহাজে গোলাবর্ষণের ঘটনায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। এ বিষয়ে দ্রুত জনগণের কাছে ব্যাখ্যা দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে দলটি।

এছাড়াও, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, বিশেষ করে ঔষধের দাম ১০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি। সিলেট বিভাগের বন্যা দুর্গতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে।

আন্দোলন শেষ হয়নি

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন থেকে বিএনপি সরে আসেনি। ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে আমাদের শত শত নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। এই সরকারের নির্যাতনের কারণে এখনও আমরা সফলতা দেখতে পাচ্ছি না। তবে, ন্যায়ের পথে কোনো আন্দোলন ব্যর্থ হয়নি, আমাদেরটাও হবে না।’

প্রথম আলো থেকে অনূদিত