ভারতের প্রতিশোধ, বিদায়ের ঝুঁকিতে অস্ট্রেলিয়া

সুপার এইটে পরপর দুই জয়ে চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার এইটের পথ অনেকটাই মসৃণ করে রেখেছিল ভারত। গাণিতিক হিসেবে কিছুটা অনিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার জন্য ছিল বাঁচা-মরার উপলক্ষ। এমন মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভারতের কাছে ২৪ রানে হেরে গেল অজিরা।

বিশাল রান তাড়ায় প্রথম ওভারেই সাজঘরে ফিরে যান ডেভিড ওয়ার্নার। ছবি: আইসিসি

আজ সোমবার সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন স্যামি স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে পাঁচ উইকেটে ২০৫ রানের পাহাড় গড়ে ভারত। জবাবে সাত উইকেটে ১৮১ রান তুলতে সক্ষম হয় অস্ট্রেলিয়া। এই জয়ে সুপার এইটের জায়গা করে নিলো রোহিত শর্মার দল। অন্যদিকে বিদায়ের ঝুঁকিতে পড়ল অস্ট্রেলিয়া।

ম্যাচের ভাগ্য প্রায় নির্ধারণ হয়ে গেছে প্রথম ইনিংস শেষেই। তবে বিশাল রান তাড়ায় দীর্ঘ সময় ভালোভাবেই লড়াইয়ে ছিল অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ওভারে ডেভিড ওয়ার্নারের উইকেট হারানোর পরও ম্যাচ থেকে দলকে ছিটকে যেতে দেননি ট্রাভিস হেড ও অধিনায়ক মিচেল মার্শ। দ্বিতীয় উইকেটে ৮১ রানের জুটি গড়েন তারা।

রানের চাকা সচল রাখার মূল দায়িত্বটা পালন করেন হেড। গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালেও এই হেড ‘মাথা ব্যথা’র কারণ হয়ে উঠেছিল ভারতের। শেষ পর্যন্ত তার দারুণ ব্যাটিংয়ে ভারতীয়দের কাঁদিয়ে শিরোপা জেতে অস্ট্রেলিয়া। আজও বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে লড়াই করছিলেন সেই হেড। দুশ্চিন্তা বাড়াতে থাকেন ভারতের।

ইনিংসের শেষ দিকে গিয়ে রণেভঙ্গ দেন হেড। ৪৩ বলে ৭৬ রানে আউট হন তিনি। নয়টি চার ও চারটি ছক্কার সুবাদে বিধ্বংসী ইনিংসটি সাজান হেড। হেডকে ফেরান জাস্প্রিত বুমরাহ। ম্যাচ ঝুঁকে পড়ে ভারতের দিকে। শেষ দিকে টিম ডেভিডের ১৫ ও প্যাট কামিন্সের ১১* রানের ইনিংস অজিদের হারের ব্যবধান কমিয়েছে মাত্র।

আসলে হারের ব্যবধান কমাতে পেরেও একটা স্বস্তি পাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। অন্তত রান রেটের হিসেবে বাদ পড়তে হবে না তাদের। এই হিসেব মাথায় রেখে শুরু থেকেই দ্রুতগতিতে রান তুলেছে অজিরা। ১৩ ওভার শেষ দুই উইকেটে ১২৮ রান তুলে ফেলেছিল তারা। এরপর পরপর দুই ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে ম্যাচ কঠিন করে ফেলে অস্ট্রেলিয়া।

২৮ বলে ৩৭ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন অধিনায়ক মার্শ। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ১২ বলে কুড়ি রান করেন। তার আউটের পর থেকেই ম্যাচ থেকে সরে যেতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। ভারতের পক্ষে ৩৭ রানে তিন উইকেট নেন পেসার আর্শদীপ সিং। ২৪ রানে দুটি শিকার কুলদীপ যাদবের। তবে ম্যাচ সেরা হয়েছেন রোহিত।

ভারত যে দুশো ছাড়িয়েছে সেটি এই ওপেনারের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের কারণেই। কিন্তু আক্ষেপ নিয়ে ২২ গজ ছাড়তে হয় তাকে। অল্পের জন্য সেঞ্চুরি পেলেন না ভারত অধিনায়ক। ৪১ বলে ৯২ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন এই ওপেনার। সাতটি চার ও আটটি ছক্কায় ইনিংস সাজান রোহিত।

রোহিতের গড়ে দেওয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে সুযোগ কাজে লাগান অন্যরা। ১৬ বলে ৩১ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে বিদায় নেন সূর্যকুমার যাদব। ২২ বলে ২৮ রানে ফেরেন শিভাম দুবে। ইনিংসের শেষ দিকে ঝড় ওঠে হার্দিক পান্ডিয়ার ব্যাটে। ১৭ বলে ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন ভারতীয় অলরাউন্ডার। ১৪ বলে ১৫ রানের মন্থর গতির ইনিংস খেলেন ঋষভ প্যান্ট।

অথচ এমন ম্যাচে ওপেনার বিরাট কোহলি পাঁচ বল খেলেও খুলতে পারেননি রানের খাতা। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ৫৬ রানে দুই উইকেট নেন মার্কাস স্টয়নিস। ৪৫ রানে দুটি শিকার আরেক পেসার মিচেল স্টার্কের। তবে অন্যরা যেখানে উদার সেখানে বল হাতে যথেষ্ট মিতব্যয়ি ছিলেন জশ হ্যাজলউড।

চার ওভারে স্রেফ ১৪ রানে এক উইকেট নিয়েছেন হ্যাজলউড। অ্যাডাম জাম্পা ও মিচেল স্টার্ক ওভার প্রতি দশের বেশি রান দিয়েও ছিলেন উইকেটশূন্য। তাদের লাগামছাড়া বোলিংই মূলত ম্যাচ অস্ট্রেলিয়ার জন্য কঠিন হয়ে যায়। অজিদের হারিয়ে গত বছরের ফাইনাল হারের বদলা নিলো ভারত।

অস্ট্রেলিয়ার হার বড় সুযোগ করে দিচ্ছে আফগানিস্তানের। আগামীকাল সকালে বাংলাদেশকে হারাতে পারলেই সেমিফাইনালে উঠে যাবেন রশিদ-নবিরা। তবে টাইগাররা জিতলেও কাজ হবে না। রান রেটে এগিয়ে থেকে সেই অস্ট্রেলিয়াই উঠবে পরের রাউন্ডে। অগত্যা অজিদের বাংলাদেশের জন্য মঙ্গল কামনা করতেই হচ্ছে। আফগানিম্তান ও অস্ট্রেলিয়ার পয়েন্ট দুই। বাংলাদেশ পয়েন্টশূন্য। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০৫/৫ (২০ ওভার)।
অস্ট্রেলিয়া: ১৮১/৭ (২০ ওভার)।
ফল: ভারত ২৪ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: রোহিত শর্মা (ভারত)।