ক্রিমিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: রাশিয়ার তীব্র প্রতিক্রিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে তলব

ক্রিমিয়ার একটি সমুদ্র সৈকতে ‘বর্বরোচিত’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া। রোববারের এই হামলায় কমপক্ষে চারজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ১৫১ জন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসডেন্ট জো বাইডেন

এই ঘটনায় মস্কোতে অবস্থিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন ট্রেসিকে তলব করেছে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সোমবার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সেভাস্তোপল শহরের কাছে রোববারের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করছে রাশিয়া।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার পর থেকেই মস্কোর দাবি, তারা পশ্চিমাদের সঙ্গে পরোক্ষ যুদ্ধে লিপ্ত। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে রুশ ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে হামলা চালানোর জন্য অস্ত্র সরবরাহের অনুমোদন দেয়। রাশিয়ার দাবি, এই সিদ্ধান্ত উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলবে এবং এর ‘পরিণাম’ ভোগ করতে হবে।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রোববার জানায়, রাশিয়া-অধিকৃত ক্রিমিয়ান উপদ্বীপে ইউক্রেনীয় বাহিনী পাঁচটি মার্কিন সরবরাহকৃত আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম (এটিএসিএমএস) ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালায়।

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, চারটি ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই ধ্বংস করা হয় এবং পঞ্চমটি আকাশে বিস্ফোরিত হয়। রুশ কর্মকর্তাদের দাবি, মার্কিন গুপ্তচর উপগ্রহ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মার্কিন বিশেষজ্ঞরা ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর উড্ডয়নপথ নির্ধারণ করেছিলেন। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এখনও কোন প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ওয়াশিংটনের এমন কর্মকাণ্ড... বিনা প্রতিক্রিয়ায় যাবে না। এর জবাব অবশ্যই দেওয়া হবে।’

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ হামলাটিকে ‘সম্পূর্ণ বর্বরোচিত’ বলে অভিহিত করেছেন। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার জবাব দেবে মস্কো।

‘আপনাদের উচিত ইউরোপে, বিশেষ করে ওয়াশিংটনে আমার সহকর্মীদের জিজ্ঞাসা করা... কেন তাদের সরকার রুশ শিশুদের হত্যা করছে,’  উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন পেসকভ।

পেসকভ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাম্প্রতিক এক মন্তব্যের কথাও উল্লেখ করেন, যেখানে পুতিন পশ্চিমা লক্ষ্যবস্তুতে সম্ভাব্য হামলার জন্য বিভিন্ন দেশকে অস্ত্র সরবরাহ করার কথা বলেছিলেন।

গত সপ্তাহে পুতিন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে একটি সামরিক জোট চুক্তিতে সম্মত হন, যা পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে রুশ কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ এখন সবচেয়ে বিপজ্জনক পর্যায়ে প্রবেশ করছে। পুতিন বারবার বিশ্বের পরমাণু শক্তিধর দেশগুলিকে জড়িত করে আরও ব্যাপক যুদ্ধের ঝুঁকির সতর্কতা দিয়েছেন।

রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে রুশ ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে নেয়। যদিও বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে, রাশিয়া এখন ক্রিমিয়াকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে। এই প্রেক্ষাপটে ক্রিমিয়ায় মারাত্মক হামলার জন্য সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করা রাশিয়ার পক্ষ থেকে তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ।

‘এর পেছনে কারা আছে, তা আমরা খুব ভালো করেই জানি,’ বলেন পেসকভ। তিনি আরও বলেন, কে ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করছে, কে তাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিচ্ছে এবং কে তথ্য সরবরাহ করছে তা স্পষ্ট।

পেসকভ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে জড়িত থাকার ফলে শান্তিপ্রেমী রুশ নাগরিকেরা প্রাণ হারাচ্ছে। এর পরিণাম অবশ্যই ভোগ করতে হবে। সেই পরিণতি ঠিক কী হবে – সময়ই বলে দেবে।’