আপনি পড়ছেন

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহর চলমান সংঘাত যদি একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে পরিণত হয়, তবে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান সমর্থিত বিভিন্ন গোষ্ঠীর হাজার হাজার যোদ্ধা হিজবুল্লাহর সঙ্গে যোগ দিয়ে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত আছে। ইরান সমর্থিত দলগুলোর কর্মকর্তারা এবং বিশ্লেষকরা সম্প্রতি এই তথ্য জানিয়েছেন।

hezbollah flagহিজবুল্লাহর পতাকা

গত বছরের অক্টোবরের শুরুতে দক্ষিণ ইসরায়েলে রক্তাক্ত হামলা চালিয়েছিল হামাস। এরপর থেকে উত্তর ইসরায়েল এবং লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনী প্রায় প্রতিদিনই গুলি বিনিময় করেছে। 

চলতি মাসে দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর একজন সামরিক কমান্ডার নিহত হন। তারপর উত্তর ইসরায়েলের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। হিজবুল্লাহ ওই অঞ্চলে শত শত রকেট ও বিস্ফোরক ড্রোন নিক্ষেপ করে প্রতিশোধ নিয়েছে।  

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা হিজবুল্লাহকে সীমান্ত থেকে দূরে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। নতুবা লেবাননে সামরিক হামলার হুমকি দিয়েছেন তারা।

গত এক দশকে লেবানন, ইরাক, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের ইরান সমর্থিত যোদ্ধারা সিরিয়ার ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধে একত্রে লড়াই করেছেন। তারা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পক্ষে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করেছেন। ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, তারা আবারও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একত্রিত হতে পারেন।

হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ গত সপ্তাহে এক বক্তৃতায় বলেছেন, ইরান, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং অন্যান্য দেশের জঙ্গি নেতারা হিজবুল্লাহকে সাহায্য করার জন্য কয়েক হাজার যোদ্ধা পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে তিনি জানিয়েছেন, লেবাননের সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটির ইতোমধ্যেই ১ লাখ যোদ্ধা রয়েছে।

তিনি বলেছেন, ‘আমরা তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছি। কিন্তু বর্তমানে আমাদের কাছে অনেক যোদ্ধা রয়েছে।' 

নাসরাল্লাহ জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাতে হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের মাত্র একটি অংশ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে যারা ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন নিক্ষেপে পারদর্শী তারাই যুদ্ধ করছে। 

তিনি বলেছেন, ‘তবে সর্বাত্মক যুদ্ধের ক্ষেত্রে তা পরিবর্তন হতে পারে। ইরান, ইরাক, ইয়েমেন, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের যোদ্ধারা এই ধরনের যুদ্ধের অংশীদার হবে।'  

এদিকে ইরান সমর্থিত লেবানিজ এবং ইরাকি গোষ্ঠীর কর্মকর্তারা বলেছেন, লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে যুদ্ধ শুরু হলে আশেপাশের অঞ্চল থেকে ইরান সমর্থিত যোদ্ধারা যোগ দেবেন। এই ধরনের হাজার হাজার যোদ্ধা ইতোমধ্যেই সিরিয়ায় মোতায়েন রয়েছে এবং তারা সহজেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কিছু গোষ্ঠী ইতোমধ্যেই ইসরায়েল ও তার মিত্রদের উপর হামলা চালিয়েছে। প্রতিরোধের অক্ষ থেকে আসা দলগুলো জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হলেই তারাও যুদ্ধ বন্ধ করবে।

ইরান সমর্থিত ইরাকি একটি গোষ্ঠীর কর্মকর্তা বাগদাদে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপিকে বলেছেন, ‘যদি সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে আমরা হিজবুল্লাহর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করব।'  অবশ্য তিনি এই বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি। আরেকজন ইরাকি কর্মকর্তা বলেছেন, তাদের কিছু উপদেষ্টা ইতোমধ্যেই লেবাননে রয়েছেন।

লেবাননের ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীর একজন কর্মকর্তাও নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘ইরাকের পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্স, আফগানিস্তানের ফাতিমিয়ুন, পাকিস্তান জেইনাবিয়ুন এবং ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর যোদ্ধারা যুদ্ধে অংশ নিতে লেবাননে আসতে পারে।' 

হিজবুল্লাহর বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ কাসিম কাসির জানিয়েছেন, বর্তমান যুদ্ধ বেশিরভাগই উচ্চ প্রযুক্তি বিশেষ করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের উপর ভিত্তি করে হচ্ছে। এর জন্য প্রচুর সংখ্যক যোদ্ধার প্রয়োজন নেই। তবে যদি একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে চলে তবে হিজবুল্লাহর জন্য লেবাননের বাইরে থেকে সমর্থনের প্রয়োজন হতে পারে।

ইসরায়েলও বিদেশি যোদ্ধাদের সম্ভাব্য আগমন সম্পর্কে সচেতন। ২০ জুন, বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনভিত্তিক মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউট আয়োজিত একটি প্যানেল আলোচনায় ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনাবিষয়ক সাবেক প্রধান এরান এটজিয়ন জানিয়েছেন, তিনি বহু ফ্রন্টে যুদ্ধের উচ্চ সম্ভাবনা দেখছেন।   

তিনি বলেছেন, 'এই যুদ্ধে হুথি এবং ইরাকি মিলিশিয়ারা হস্তক্ষেপ করতে পারে। এছাড়া আফগানিস্তান, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন স্থান থেকে লেবাননে এবং ইসরায়েল সীমান্তবর্তী সিরিয়ায় জিহাদিদের ব্যাপক আগমন ঘটতে পারে।' 

ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি গত সপ্তাহে একটি টেলিভিশন বিবৃতিতে বলেছেন, ৮ অক্টোবর থেকে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলে আক্রমণ শুরু করে। এরপর থেকে তারা ইসরায়েলের দিকে ৫ হাজারের বেশি রকেট, অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল এবং ড্রোন নিক্ষেপ করেছে।

হিজবুল্লাহ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধ চান না, যদি এটি ঘটে তবে তারা প্রস্তুত রয়েছেন।

সূত্র: এপি

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.