ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি: জাতিসংঘের ফৌজদারি মামলার হুঁশিয়ারি!

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষে নতুন মাত্রা যোগ করেছে জাতিসংঘের এক সতর্কবার্তা। জাতিসংঘ বলেছে, ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানিকারী যেকোনো সংস্থা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে সহযোগী হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বৃহস্পতিবার (২০ জুন) ৩০ জন আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞের এক দল এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে জাতিসংঘের বেশ কয়েকজন বিশেষ দূত রয়েছেন।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি ট্যাংক - ছবি সংগৃহীত

তারা বলেছেন, ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহকারী কোম্পানিগুলিকে তাদের সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ বন্ধ করা উচিত, ‘এমনকি যদি সেগুলো বিদ্যমান রপ্তানি লাইসেন্সের আওতায়ও পড়ে।’

এক বিবৃতিতে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘এই কোম্পানিগুলো ইসরায়েলি বাহিনীতে অস্ত্র, যন্ত্রাংশ, উপাদান এবং গোলাবারুদ পাঠিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের সহযোগী হওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছে।’

এ বিষয়ে ইসরায়েলের তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, ইসরায়েল বারবার গাজার অভিযানের সময় নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেছে এবং দাবি করেছে যে তারা আত্মরক্ষার জন্য কাজ করছে এবং হামাস জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই করছে, ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে নয়।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেন, গত মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত ইসরায়েলকে গাজা উপত্যকার দক্ষিণ প্রান্তে রাফায় সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে অস্ত্র প্রস্তুতকারকদের ঝুঁকি বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘এই প্রেক্ষাপটে, ইসরায়েলে অব্যাহত অস্ত্র স্থানান্তরকে এমন অভিযানের জন্য সচেতনভাবে সহায়তা প্রদান হিসেবে দেখা যেতে পারে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের পরিপন্থী এবং এই জাতীয় সহায়তা থেকে লাভ অর্জনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।’

ইসরায়েল গণহত্যার অভিযোগকে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন বলে প্রত্যায়ন করেছে।

ব্রিটিশ অস্ত্র প্রস্তুতকারকদেরও সতর্ক করে বলা হয়েছে যে গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণের মধ্যে যুদ্ধাপরাধ রোধে ব্যর্থ হওয়ার জন্য ইসরায়েলে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

ক্যাম্পেইন অ্যাগেইনস্ট আর্মস ট্রেডসহ (সিএএটি) চারটি অস্ত্র-বিরোধী প্রচারণা গোষ্ঠী ২০টি ব্রিটিশ সংস্থাকে লেখা এক চিঠিতে ‘গাজায় বর্তমানে যে ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে তার জন্য সম্ভাব্য ফৌজদারি দায়’ তুলে ধরেছে। এই সংস্থাগুলো এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ বা সফটওয়্যার সরবরাহ করে, যা ইসরায়েলি বিমান বাহিনী হামাস-নিয়ন্ত্রিত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে বোমা হামলা চালাতে ব্যবহার করছে।

২০০১ সালের আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত আইনের একটি ধারা উদ্ধৃত করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘যুদ্ধাপরাধ বা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের সহায়ক আচরণে জড়িত হওয়া’ ইংরেজি এবং ওয়েলশ আইনের অধীনে একটি অপরাধ।

দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, কর্মীরা যেসব সংস্থাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে তাদের মধ্যে রয়েছে লকহিড মার্টিন, বিএই সিস্টেমস এবং নর্থ্রপ গ্রুমানের যুক্তরাজ্য শাখা।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় বুধবার বলেছে যে ইসরায়েলি বাহিনী বারবার যুদ্ধের আইন লঙ্ঘন করেছে এবং গাজা সংঘাতে বেসামরিক নাগরিক এবং যোদ্ধাদের মধ্যে পার্থক্য করতে ব্যর্থ হয়েছে। ইসরায়েল এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুসারে, ইসরায়েলের বিমান ও স্থল আক্রমণে হামাস-শাসিত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ৩৭,৪০০ এরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

ইসরায়েলি হিসাব অনুসারে, ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা দক্ষিণ ইসরায়েলে সীমান্ত অতিক্রম করে হামলা চালিয়ে প্রায় ১,২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫০ জনেরও বেশি মানুষকে জিম্মি করে নেওয়ার পর ইসরায়েল ফিলিস্তিনে এক ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে।