হজে তীব্র উষ্ণতায় শত শত হাজির মৃত্যু!

সৌদি আরবে এ বছরের হজ মৌসুমে তীব্র উষ্ণতার কারণে শত শত হাজির মৃত্যু হয়েছে বলে বুধবার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। মৃতদের পরিবারের সদস্যরা মরদেহ শনাক্তকরণের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। খবর এপি।

ছবি - সংগৃহীত

উষ্ণতাজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। তবে মক্কার আল-মুয়াইসেম এলাকার জরুরি সেবা কমপ্লেক্সের সামনে শত শত মানুষ নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের খোঁজে ভিড় করেছেন।

অনলাইনে প্রচারিত একটি তালিকায় দেখা গেছে, পাঁচ দিনের হজের সময় অন্তত ৫৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারের কাছ থেকে প্রকাশিত তথ্য নিয়ে আলোচনার জন্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক জানান, তালিকার নামগুলো সঠিক বলে মনে হচ্ছে। ওই চিকিৎসক এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের বিশ্বাস অন্তত ৬০০ মরদেহ মক্কার জরুরি সেবা কমপ্লেক্সে রয়েছেন।

এপ্রিল সংস্করণের জার্নাল অব ইনফেকশন অ্যান্ড পাবলিক হেলথের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, প্রতি বছর, নিম্ন আয়ের দেশ থেকে লাখ লাখ হজযাত্রী হজ্জ পালন করতে আসেন, ‘যাদের অনেকেরই হজের আগে স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার সুযোগ ছিল না বললেই চলে’।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, একইসঙ্গে জমায়েত হওয়া জনতার মধ্যে সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে, যাদের মধ্যে অনেকেই তাদের সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে এই যাত্রায় এসেছেন এবং অনেকেই আগে থেকেই বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন।

এ বছর অস্বাভাবিক সংখ্যক মৃত্যুর কারণ হিসেবে উষ্ণতাকে দায়ী করা হচ্ছে। জর্ডান ও তিউনিসিয়া সহ বেশ কিছু দেশ জানিয়েছে যে তাদের কিছু হাজি উষ্ণতার কারণে মারা গেছেন।

সৌদি জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার মক্কা এবং পবিত্র স্থানগুলোতে তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (১১৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) পৌঁছেছে। শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের সময় অনেকেই অজ্ঞান হয়ে পড়তে দেখা গেছে।

মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদে সোমবার তাপমাত্রা ৫১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (১২৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) পৌঁছেছে।

এছাড়া, অনেকে (বিশেষ করে মিশরীয়) জনসমাগম ও উষ্ণতার কারণে তাদের স্বজনদের খুঁজে পাননি। সৌদি হজ কর্তৃপক্ষের মতে, ২০২৪ সালে ১৮ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি মুসলিম হজ পালন করেছেন, যার মধ্যে ২২টি দেশের ১৬ লাখেরও বেশি হাজি এবং প্রায় ২ লাখ ২২ হাজার সৌদি নাগরিক ও বাসিন্দা ছিলেন।

বুধবার মক্কার জরুরি সেবা কমপ্লেক্সে একজন মিশরীয় যখন তার মায়ের নাম মৃতদের তালিকায় শুনেন, তখন তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করার পর, তিনি তার সেলফোনে একজন ট্রাভেল এজেন্টকে ফোন করে চিৎকার করে বললেন: ‘সে তাকে মরতে দিয়েছে!’ উপস্থিত জনতা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।

কমপ্লেক্সে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। একজন কর্মকর্তা মৃতদের নাম এবং জাতীয়তা (আলজেরিয়া, মিশর এবং ভারত সহ) পড়ে শোনাচ্ছিলেন। যারা মৃত ব্যক্তির আত্মীয় বলে দাবি করেছেন, তাদের মরদেহ শনাক্ত করার জন্য ভিতরে যেতে দেওয়া হয়েছে।

এসোসিয়েটেড প্রেস মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে পারেনি। সৌদি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি।

সৌদি আরবের শাসক আল সৌদ পরিবার তাদের তেল সম্পদ এবং ইসলামের পবিত্র স্থান পরিচালনার মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বে বড় প্রভাব বজায় রেখেছে। বর্তমান বাদশাহ সালমান ‘দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম’ উপাধি গ্রহণ করেছেন, যা মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদ (কাবা ঘরের আবাসস্থল) এবং মদিনার মসজিদে নববিকে নির্দেশ করে।

সৌদি আরব হজের সময় জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেছে। তবে বিপুল সংখ্যক হাজির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন।

জলবায়ু পরিবর্তন এই ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (এমআইটি) বিশেষজ্ঞরা ২০১৯ সালের একটি গবেষণায় দেখেছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব প্রশমিত করতে বিশ্ব সফল হলেও, ২০৪৭ থেকে ২০৫২ এবং ২০৭৯ থেকে ২০৮৬ সালের মধ্যে হজ চলাকালীন ‘চরম বিপদজনক’ তাপমাত্রায় পৌঁছাবে।

২০১৫ সালে মিনায় হজের সময় পদদলিত হয়ে ২,৪০০ জনেরও বেশি হাজি নিহত হন, যা হজের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা। সৌদি আরব কখনোই পদদলিতের পুরো পরিসংখ্যান স্বীকার করেনি। এর আগে, মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদে একটি ক্রেন ধসে ১১১ জন নিহত হয়েছিলেন।

হজের ইতিহাসে দ্বিতীয় সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা হলো ১৯৯০ সালের পদদলিত হওয়া ঘটনা, যেখানে ১,৪২৬ জন নিহত হয়েছিলেন।